News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

শহরের বাজারে সয়াবিনের অতিরিক্ত মূল্য


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৫, ১০:৫৯ পিএম শহরের বাজারে সয়াবিনের অতিরিক্ত মূল্য

বাজার মনিটরিং, ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অর্থদণ্ড, ট্রাক সেল কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা সয়াবিন তেলের অতিরিক্ত মূল্য আদায়। খুচরা ও পাইকারি বাজারে তেলের সংকট নিরসনে নারায়ণগঞ্জে ভোজ্য তেল কারখানার প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময়কালে সয়াবিন তেল প্রস্তুতকারী কোম্পানির গুলোর কর্মকর্তারা জানান তাদের পক্ষ থেকে তেল সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। এই মুহূর্তে কাঁচামালের কোনো সংকট নেই। পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে এবং প্রতিদিন তেলের সরবরাহ করা হচ্ছে। ডিলার বা সাব ডিলাররা কোন কারসাজি করে থাকলে সেই বিষয়ে তারা অবগত নয়। তাদের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীদের কারসাজি ভাঙতে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নিয়মিত তদারকি ও ব্যবসায়ীগণ যেন ভোক্তার কাছে সঠিক দামে পণ্য বিক্রি করে লক্ষ্যে বাজার মনিটরিং করে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি মেঘনা গ্রুপের মাধ্যমে ট্রাকে করে বিশেষ অফারে কম দামে সয়াবিন তেল সহ তিনি, আটা ময়দা রমজান উপলক্ষ্যে বিশেষ ছাড় দিয়ে বিক্রি শুরু করে।

এর মধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের বেশ কিছু বাজারে গিয়ে বাজার মনিটরিং করেন। সেই সাথে বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীকে সয়াবিন তেলের অতিরিক্ত মূল্য রাখায় আর্থিক দণ্ড প্রদান করেছে। কিন্তু কিছুতেই যেন সয়াবিন তেলের অতিরিক্ত মূল্য আদায় বন্ধ করা যাচ্ছে না।

মঙ্গলবার ১১ মার্চ সরেজমিনে দ্বিগুবাবুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি এক লিটার সয়াবিন তেলের ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। কোম্পানি ভেদে এর মূল্যও কম বেশি আদায় করা হচ্ছে। রফিকুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা ১৭৫ টাকার সয়াবিন তেল ২২০ টাকা কেন রাখা হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে দোকানদার উত্তর দিচ্ছেন নিলে নেন নয়তো বাজার ঘুরে দেখেন অন্য কোনো দোকানে গিয়ে দেখেন তেল পান কিনা। পুরো বাজার ঘুরে এক কার্টন তেল কিনে আনতে পারিনা। মাত্র ৫ টাকা লাভে তেল বিক্রি করছি। আবার মোবাইল কোর্ট এসে জরিমানা করে দেয় ৫-১০ হাজার করে আমরা কোথায় যাবো। ডিলাররা যদি আমাদের মাল না দেয় তাহলে আমরা কিভাবে বিক্রি করবো। বেশি দামে কিনে আনি তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।

এদিকে ওই ক্রেতার সাথে আলাপকালে তিনি জানান, আসলে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান হওয়া উচিত ডিলারদের গোডাউনে। তারা তেল স্টক করে কৃত্রিম ভাবে মূল্য বৃদ্ধি করে রমজান মাসে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করছে। পত্র পত্রিকায় দেখলাম বাজারে কোম্পানি গুলো থেকে তেল সরবরাহে কোন ঘাটতি নেই। তাহলে কেন খুচরা বাজারে তেলের অতিরিক্ত দাম নেওয়া হচ্ছে। আসলে রমজান মাসে আল্লাহ শয়তানকে বন্দি রাখে তখন আমাদের দেশে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের শয়তানের দায়িত্ব নিজ কাধে তুলে নিয়ে এভাবে মানুষের পকেট কাটে।

এদিকে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই মতবিনিময় সভায় সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, টিকে গ্রুপ ও আবুল খায়ের গ্রুপের ভোজ্য তেল প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, নিতাইগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শংকর সাহা, যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দাস উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জানতে চাওয়া হয় রোজার শুরু থেকেই বাজারে বোতলজাত তেল কেন পাওয়া যাচ্ছে না। নিতাইগঞ্জের পাইকারী ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ‘নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বোতলজাত তেলের সরবরাহ নেই। বিভিন্ন গ্রুপগুলো কাদের কাছে তেল সরবরাহ করছে, কি পরিমান সরবরাহ করছে তা অজানা।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভোজ্য তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা জানান, ‘এই মুহূর্তে কাঁচামালের কোনো সংকট নেই। পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে এবং প্রতিদিন তেলের সরবরাহ করা হচ্ছে। ডিলার বা সাব ডিলাররা কোন কারসাজি করে থাকলে সেই বিষয়ে তারা অবগত নয়।’

সভায় নিতাইগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অভিযোগ করেন, ‘কোম্পানিগুলো কতজন ডিলার নিয়োগ দিয়েছে নারায়ণগঞ্জে তা অজানা। সেই সাথে সিরিয়াল ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করেননা। চার মাস আগে আবেদন করে রাখলেও দেখা যাচ্ছে এক মাস আগে আবেদনকারী আগে তেল পেয়ে যাচ্ছে। এছাড়া তিনি নারায়ণগঞ্জে সিটি গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন। দাবি করেন, সিটি গ্রুপের একজন মাত্র ডিলার পুরো তেলের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। একাধিক ডিলার দেয়া হলে এই মনোপলি ভেঙে দেয়া সম্ভব। এছাড়া ডিলাররা তেল নিয়ে এসে গোপনে অন্য জেলায় বিক্রি করে দেয়। এর ফলে তেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়।’

অভিযোগের বিষয়ে সিটি গ্রুপের প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জে একাধিক ডিলার নিয়োগের বিষয়ে আশ্বস্থ করেন। সেই সাথে স্থানীয় ডিলার অনিয়ম করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন প্রশাসকের কাছে।

এছাড়া মেঘনা গ্রুপ ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের প্রতিনিধিরা জানায়, তাদের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জে কতজন তাদের ডিলার এবং জেলায় কি পরিমান সরবরাহ করা হয়েছে তা জানাতে পারেনি।

বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিনিধিরা জানায় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে তেলের উৎপাদন কিছুটা কমে এসেছে। তবে বিদ্যমান উৎপাদনের পুরোটাই বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে।

সভার শেষে জেলা প্রশাসক তেল সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে কোন কোম্পানির কতজন ডিলার রয়েছে এবং তাদের কি পরিমান সরবরাহ করা হয় প্রতি সপ্তাহে সেই তথ্য আমাদের পাঠাবেন। এর মাধ্যমে আমরা বাজার যাচাই করতে পারবো। বাজারে নিত্যপন্যের দাম বিগত রোজার মাসগুলোর চাইতে কম থাকলেও কেবল তেল নিয়ে কারসাজি চলছে। আমরা এটা বন্ধ করতে চাই। কোন কোম্পানি যদি একক ডিলার রাখেন, তাহলে বাজারে অস্থিরতা হওয়া স্বাভাবিক, একাধিক ডিলার নিয়োগের অনুরোধ করবো আমরা। নারায়ণগঞ্জের মানুষকে স্বস্থি দিতে এক সপ্তাহের মধ্যে তেলের বাজারে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী, এনএসআই যুগ্ম পরিচালক দাদন মুন্সি, ইউএনও সোনারগাঁ ফারজানা রহমান, ইউএনও রূপগঞ্জ সাইফুল ইসলাম, জেলা ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বনিক, কৃষি বিপনন কর্মকর্তা ইবনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

Islam's Group