News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

৬৬ বছর ধরে ৩টি হাটে শরবত বিক্রি করছেন বৃদ্ধ মজিবর


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪, ১০:০৫ পিএম ৬৬ বছর ধরে ৩টি হাটে শরবত বিক্রি করছেন বৃদ্ধ মজিবর

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মোগড়াপাড়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের কোল ঘেঁষে সুপ্রাচীন আর ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষীয় কাইকারটেকের হাট। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে গড়ে ওঠা কাইকারটেক হাটের পাতাঝরা কড়ই এবং হিজল গাছগুলো যেন বয়সকালের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তেমনি ঐতিহ্যবাহী এই হাটের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছেন ৮২ বছর বয়সী বৃদ্ধ মজিবর রহমান। যার শৈশব কৈশোর যৌবন তথা জীবনের পুরোটা সময় কেটেছে এই হাটে। তবে শুধু কাইক্কারটেক হাটেই নয় নারায়ণগঞ্জ জেলার ৩টি হাটে পাওয়া যায় মজিবর চাচার জাদুকরী হাতের মিঠাইয়ের শরবত।

হাটে আসা লোকজন জানান, তাঁর হাতে বানানো গুড়ের শরবত পান করতে অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে চলে আসে। তিনিও আগ্রহের সঙ্গে ক্লান্তিহীনভাবে ঘষে ঘষে বরফকুচি তৈরি করে কাঁচের গ্লাসে নিয়ে তাতে তাজা গুড় নিয়ে ঘুঁটনি দিয়ে হাতের সাহায্যে নেড়েচেড়ে শরবত বানান। শেষে গ্লাসে ঝাঁকিয়ে নিয়ে মিশিয়ে দেন সতেজ, তাজা ও সুগন্ধি লেবুর টুকরো। পরিবেশনের সময় কাচের গ্লাসে বরফ গুড়ের মিশ্রণের মাঝে ভাসতে থাকা লেবুর টুকরোয় লেগে থাকা পানির বিন্দু যেন মজিবর রহমানের শরবতের জন্য তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয়। প্রতি গ্লাস শরবত তিনি ২০ টাকা করে বিক্রি করেন। শীতের সময় বিক্রি কমে এলেও গরমের সময় দিনে কয়েকশ’ গ্লাস গুড়ের শরবত বিক্রি করেন। দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে হাটে শরবত প্রেমীদের পিপাসা মিটিয়ে আসছেন মজিবর রহমান। প্রতি রোববার শতবছরের পুরোনো এই প্রাচীন হাটের ঠিক মধ্যবর্তী স্থানেই শরবত বিক্রি করে যাচ্ছে ৮২ বছর বয়সী বৃদ্ধ মজিবর রহমান। হাট জমে উঠার সঙ্গে সঙ্গে লেবু-গুড়ের শরবত পান করার জন্য ভিড় বাড়তে শুরু করে।

এই হাটে ৬৬ বছর ধরে শরবত বিক্রি করেন মজিবর রহমান। তিনি জানান, এই কাইকারটেক হাটটি ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে। তিনি এই হাটে ৬৬ বছর ধরে শরবত বিক্রি করে আসছেন। তার আগে তার বাবা এখানে শরবত বিক্রি করতেন। তার বাবাও আনুমানিক ৩০ বছরের মতো এখনো শরবত বিক্রি করেছেন। তিনি ১৬ বছর বয়স থেকে শরবত বিক্রি করছেন। তিনি চার আনা থেকে শরবত বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে ২০ টাকা দরে শরবত বিক্রি করছেন। আগে চিনির শরবতও করতেন। এখন শুধু গুড়, লেবু ও বরফ দিয়ে শরবত বিক্রি করছেন। দীর্ঘ ৬৬ বছর ধরে হাটে হাটে গুড়ের শরবত বানিয়ে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। রোববার কাইক্কারটেক হাটে, বৃহস্পতিবার সোনাকান্দা হাটে ও শুক্রবার লাঙ্গলবন্দের হাটে শরবত বিক্রি করেন। বাকী ৩ দিন বিশ্রাম নেন। সংসারে ১ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। শরবত বিক্রি করে তিনি বসতবাড়ি নির্মাণ করেছেন। ছেলেকে সৌদিআরব পাঠিয়েছেন। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বয়স হয়ে গেলেও তিনি কারো উপর নির্ভরশীল থাকতে রাজী নন বলে জানান।

বর্তমানে বয়স হয়ে যাওয়ায় তার ভাগিনা আশরাফ উদ্দীন তাকে সঙ্গ দিয়ে থাকেন। ভাগিনা আশরাফ জানান, মামার সঙ্গে দোকানে আখের গুড়, লেবু ও বরফের মাধ্যমে সুমিষ্ট শরবত তৈরি করে বিক্রি করে আসছি সেই ছোট থেকেই। দূরদূরান্ত থেকে যারাই এই হাটে বাজার করতে আসেন তারা এই দোকানের শরবত না খেয়ে যান না।

Islam's Group