News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

৫ চেয়ারম্যান অধরা


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫, ১০:২৭ পিএম ৫ চেয়ারম্যান অধরা

এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা যারা আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিভিন্ন রকমেরর সুযোগ সুবিধাভোগী হয়েছেন। বিভিন্ন রকমের বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়েছেন। ধরাকে সরাজ্ঞান করে নানা রকমের অপকর্ম করে বেড়িয়েছেন। সাধারণ মানুষজনকে নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন করেছেন।

কিন্তু গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও এখনও এসকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই তালিকায় রয়েছেন- আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের ফজর আলী, বন্দর উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ ও মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম।

তাদের মধ্যে কয়েকজন আত্মগোপনে থাকলেও দুই একজন চেয়ারম্যান আবার আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতেও শুরু করেছেন।

বিশেষ করে বন্দর উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন প্রকাশ্যেই সভা সমাবেশ করে বেড়াচ্ছেন। সেই সাথে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। অথচ এই মাকসুদ হোসেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালিন সময়ে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা অপকর্ম করে বেড়িয়েছেন। একসময় ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত থাকলেও বন্দর উপজেলা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মাকসুদ হোসেনের সম্পর্ক নষ্ট হয়। তারপরেও আওয়ামী লীগের কিছু কিছু নেতার আশ্রয়ে তার দাপট যেন কমেনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবারও তিনি বিএনপি নেতাদের আশ্রয়ে ফেরার চেষ্টা করছেন। মহানগরের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ম্যানেজ করে প্রকাশ্যেই চলাফেরা করে বেড়াচ্ছেন। যেন কারও কিছু বলার নেই। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার থাকাবস্থায় তার দ্বারা কত মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা যেন বলার অপেক্ষা রাখে না।

সূত্র বলছে, দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ। আর এই ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও আওয়ামী লীগের দ্বারা মানুষজন নানাভাবে নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমানের পরিবারের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে নারায়ণগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের একটি চক্র গড়ে উঠেছিলো। যারা সবসময় ওসমান পরিষদের সাথে অষ্টেপৃষ্ঠে লেগে থাকতেন। ওসমান পরিবারের সদস্যরা যে কমান্ড করতেন তা একবাক্যে মেনে নিতেন। সেই সাথে বিভিন্ন সভা সমাবেশে বলে বেড়াতেন নারায়ণগঞ্জে কোনো দল নেই। নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবার যা বলবে তাই হবে। ওসমান পরিবারের বাইরে কোনো কথা হবে না।

এরই মধ্যে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর পতন হওয়ার সাথে সাথেই ওসমানের পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যান। ওসমান পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে চলে গেলেও ওসমান পরিবার ঘেঁষা এসকল চেয়ারম্যান বহাল তবিয়তে থেকে যাচ্ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক বৈষম্যবিরোধী মামলা হলেও গ্রেফতার হচ্ছে না।

সবশেষ নারায়ণগঞ্জের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় মো. দেলোয়ার হোসেন প্রধান নামে এক ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে বন্দর ঘাট সংলগ্ন এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার দেলোয়ার হোসেন প্রধান বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। সেই সাথে তিনি জেলা জাতীয় পার্টির সহ সভাপতি পদে ছিলেন। পাশাপাশি তিনি ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, মো. দেলোয়ার হোসেন প্রধান নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। তাকে কোন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে সে বিষয়ে কাজ চলছে।

এদিকে বৈষম্যবিরোধ ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নারায়ণগঞ্জে বদিউজ্জামান নামে এক গার্মেন্টস শ্রমিক হত্যার অভিযোগে ৩৬ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর নিহতের স্ত্রী মোসাম্মৎ আদুরী খাতুন বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় এই মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার আসামীর তালিকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক এমপি এ কে এম শামীম ওসমান, শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমিরী ওসমান, শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমানের সাথে আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ও গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজর আলী রয়েছেন। তাদের মধ্যে জাকির হোসেনের পক্ষে মহানগর বিএনপির কোনো কোনো প্রকাশ্য সাফাই গেয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে বন্দরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী  সাইফুল ইসলামের  বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা করা হয়। গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে হামলা, ভাংচুর ও  লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায়  ওই শিক্ষার্থীর পিতা মতিউর রহমান বাদী হয়ে  সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ সহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। এছাড়াও তার নামে বিভিন্ন মামলা রয়েছে। তারপরে তারা যেন ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

পাশাপাশি গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের ফজর আলী, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ ও মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালামকেও এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

Islam's Group