বন্দর জুড়ে অবৈধ বালুর ড্রেজারে সয়লাব করেছে। শীতলক্ষ্যা ও ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে দেদারসে ড্রেজার বসিয়ে কেটে নেওয়া হচ্ছে নদীর বালু। দলীয় পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার করে এসব ড্রেজার পাইপ স্থাপন করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের মাসিক সভায় এসব অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।
অবৈধ এই ড্রেজার ব্যবসা এমন পর্যায় পৌঁছেছে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ কেটে, জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা সুড়ঙ্গ করে পাইপ স্থাপন করার সংবাদ স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ড্রেজার পাইপ নিয়ে সংঘর্ষ ও গুলি বর্ষণের মত ঘটনাও ঘটেছে বন্দরে।
বন্দরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে শুধুমাত্র ২৪নং ওয়ার্ডের চৌরাপাড়া এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর পর পাশাপাশি ৩টি ড্রেজার স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় বিএনপির নেতারা এসব ড্রেজার স্থাপন করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও মুছাপুর, কলাগাছিয়া ও বন্দর ইউনিয়ন এলাকায় অসংখ্য ড্রেজার পাইপ বসানো হয়েছে। পুরো বন্দর থানা এলাকা যেন মকসাড় জালের মত ড্রেজার পাইপে ছেয়ে গেছে।
এসব ড্রেজার ব্যবসার নিয়ন্ত্রন নিয়ে দলীয় নেতারা নিজেদের মাঝে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।
সাধারণ এলাকাবাসীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েও এভাবে রাস্তার উপর দিয়ে ড্রেজার পাইপ স্থাপন করে শীতলক্ষ্যা ও ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালু উত্তোলন করে ব্যবসা করেছে আওয়ামী লীগের নেতারা। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে গেলেও অবৈধ ড্রেজার ব্যবসা বন্ধ হয়নি। বরং আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের স্থলে এখন বিএনপির নেতারা ড্রেজার পাইপ স্থাপন করছে। একই এলাকায় একাধিক নেতা ড্রেজার পাইপ বসাচ্ছে। আর সেগুলোর নিয়ন্ত্রন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের মত ঘটনাও ঘটছে।
গত ২৮ ডিসেম্বর বন্দরে রাস্তার ওপর দিয়ে অবৈধভাবে ড্রেজারের পাইপ স্থাপনের সময় বাধা দিলে এলাকাবাসীর ওপর হামলা করা হয়। এ সময় ফাঁকা গুলি ছোড়ার অভিযোগও পাওয়া যায়। বন্দরের নবীগঞ্জ বড়বাড়ি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। হামলাকারীরা স্থানীয় মো. রকিব (৫৫) ও মো. রাসেল (৪২) নামের দুই ব্যক্তিকে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ড্রেজার পাইপ বসানো নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। ড্রেজারের প্লাস্টিক পাইপ খুলে লোহার পাইপ লাগানোর সময় বড়বাড়ি এলাকার বাসিন্দা রকিব ও রাসেল পাইপ স্থাপন কাজে বাধা দেন। এ সময় কবিলের মোড় এলাকার শাহীন আহাম্মেদ ওরফে সৌরভ ও তাঁর বড় ভাই রাজিব, ইস্পাহানী এলাকার আমানসহ ২০-২৫ জন আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাধাদানকারীদের ওপর হামলা চালান। হামলাকারীরা পিস্তল দিয়ে কয়েকটি ফাঁকা গুলিও ছোড়েন। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়াও কলাগাছিয়া এলাকায় ড্রেজার পাইপ স্থাপন নিয়ে বন্দর থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন শিশির ও যুবদল নেতা রাসেলের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এমন প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই ড্রেজার ব্যবসা নিয়ে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এসব পাইপের জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের দাবি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব অবৈধ ড্রেজারে বিরুদ্ধে যেন কঠোর ভাবে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :