নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান মুক্তি পেতে যাচ্ছেন আগামী রবিবার। সেদিন সকাল ৮টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পাবেন প্রচার করছেন অনুসারীরা। মুক্তি পর জাকির খান প্রথমে শহরের দেওভোগের বাসায় যাবেন। মুক্তি উপলক্ষ্যে অনুসারীরা ব্যাপক শো ডাউনের প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছেন। তবে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে জাকির খান শো ডাউন করলে পরীক্ষার্থীদের ব্যাঘাত ঘটতে পারে মনে করেন অনেক অভিভাবক।
টানা ২২ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলায় পলাতক ও সবশেষ ২ বছর ধরে কারাবন্দী ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান। এর মধ্যে জাকির খান আত্মগোপনে ও থাইল্যান্ডে দীর্ঘ সময় পার করেছেন। টান টান উত্তেজনার মধ্যে ৫ আগস্টের পরেই জামিনে মুক্তি পাবেন অনুসারীরা বললেও শেষতক আইনের মারপ্যাচে আর হয়নি। অবশেষে ৭ জানুয়ারী তিনি সেই আলোচিত হত্যা মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। সে খবর পেয়ে কারাগারের গারদখানাতে বেশ উচ্ছ্বাসিত হতে দেখা যায় জাকির খানকে। কিন্তু কাশীপুরের একটি মামলার সাজা শেষ না হওয়াতে তিনি মুক্তি পাননি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের এক সময়ের দোর্দন্ড প্রতাপশালী নেতা জাকির খানের বাবা দৌলত খান ছিলেন তৎকালীন টানবাজার পতিতালয়ের গডফাদার ছিলেন বলে আওয়ামীলীগ নেতারা দাবি করেন। সুত্রমতে, ১৯৮৯ সালে নাসিম ওসমানের (নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বর্তমান এমপি ও এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য) হাতে ধরে জাতীয় পার্টির ছাত্রসমাজে যোগ দিয়ে নারায়ণগঞ্জের ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জাকির খানের সঙ্গে নাসিম ওসমানের বিরোধ বাধে। পরে জাকির খান বিএনপি নেতা কামালউদ্দিন মৃধার নেতৃত্বে ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে দেওভোগ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পেছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে দুর্র্ধষ হিসেবে শহরে পরিচিত পান জাকির খান।
১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে জাকির খান শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড পেয়ে জেলে যান। কিন্তু প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমায় তিনি মুক্ত হন। সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর নাতি হিসেবে শহরে পরিচিত হয়ে ওঠেন জাকির খান। ওই বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার ৭ মাসের মাথায় কাশীপুর বাংলাবাজার এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় দ্বিতীয় দফায় জাকির খানের ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয় এবং তিনি জেলে যান। আওয়ামী লীগের ৪ বছর জাকির খান থাকেন জেলে।
১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য জেল থেকে বের হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদটি পেয়ে যান। আওয়ামী লীগের শাসনামলের শেষ দিকে ২০০০ সালে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ থেকে টানবাজার ও নিমতলী পতিতালয় উচ্ছেদ করলে জাকির খানের পরিবারের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যায় বলে সেসময় খবর ছড়ায়। বিশাল গাড়ী বহর নিয়ে অস্ত্রের মহড়া শুরু করলে ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আবার কারাবন্দি হন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও প্রায় ৫ মাস তিনি জেলে থাকেন। ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সাব্বির আলম খন্দকার খুন হওয়ার পর এ মামলার আসামি হওয়ায় তিনি নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে থাইল্যান্ডের সুকুমবিকে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে ’গ্রেস’ নামে ৮তলা বিশিষ্ট একটি থ্রি-স্টার হোটেল কেনেন। জাকির খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৪টি হত্যাসহ তিন ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :