নারায়ণগঞ্জে রাজনৈতিক দলের কয়েকজন আলোচিত প্রভাবশালী নেতারা রয়েছে। তাদের মধ্যে দেশত্যাগ, পলাতক ও কারাবন্দি জীবনে নারায়ণগঞ্জ থেকে কয়েক মাস বছর হারিয়ে যায় কর্মীদের মধ্যে। এরপরও ক্ষমতা পালা বদলে তাদের নাম সব সময় রাজনৈতিক দলের নেতাদের মুখে থেকে যায়। এরপর ওই প্রভাবশালী নেতাদের নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ করে যায় কর্মীদের মধ্যে। এর ফলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া নেতারা পালিয়ে যায়, অপরপক্ষ ফিরে আসে এতে কর্মীরা থাকে স্রোতে থাকা নেতাদের মধ্যে।
নারায়ণগঞ্জে রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে আওয়ামী লীগের শামীম ওসমান, গোলাম দস্তগীর গাজী, নজরুল ইসলাম বাবু, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, অয়ন ওসমান, জাতীয় পার্টির নাসিম ওসমান, সেলিম ওসমান, লিয়াকত হোসেন খোকা, আজমেরি ওসমান, বিএনপির অধ্যাপক রেজাউল করিম, তৈমূর আলম খন্দকার, মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, শাহ আলম, জাকির খান, নজরুল ইসলাম আজাদ ও মোস্তাফিজুর রহমান দীপু ভুঁইয়া। এদের মধ্যে ক্ষমতা পালা বদলের নিজের রঙ প্রকাশ হয়েছে নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী নেতা বিহীন বিএনপি একক প্রভাব রয়েছে পুরো নারায়ণগঞ্জ জুড়ে।
বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির টানা ক্ষমতা থাকায় পলাতক থাকা ও নব্য নেতারা ও তাদের ছেলে-ভাতিজারা পুরো নারায়ণগঞ্জ রাজত্ব কায়েম করে ছিলো। এতে করে সাধারণ মানুষ সহ ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে ছিলো আতংক ও ভয়ভীতি। এদিকে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে ক্ষমতাচ্যুত এমপি মেয়র মন্ত্রীরা গা-ঢাকা দিয়েছেন। এদের আত্মগোপনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সকল স্তরের নেতা-কর্মীরা পালিয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ রাজনীতিতে নেতাদের পলায়ন শুরু হয় ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সমাপ্তর মাধ্যমে। চারদলীয় জোট সরকার আগমনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান পরাজিত হওয়ায় বোরকা পড়ে পালিয়ে যান বলে জানান তার প্রতিপক্ষ বিএনপির এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। এর আট বছর পর ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকার আমলে পলাতক জীবন থেকে ফিরে দেশে আসেন শামীম ওসমান। ওই সময় নেতা-কর্মীদের জাগ্রত করার লক্ষ্যে ওসমানী স্টেডিয়ামে সংবর্ধনা আয়োজন করে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সেভ থাকার নিদের্শনায় তিনি দেশ করেন বলে দাবি করেন। এরপর থেকে তিনি আওয়ামীলীগের কোন পদে বা ক্ষমতা চেয়ার না থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠে। ২০১১ সালে জেলা প্রশাসনের সভাকক্ষে তৎকালীন এমপি কবরী সারোয়ারের সামনে আনোয়ার হোসেন সহ কয়েক নেতা উপর চড়া হয়ে আবার আলোচনা আসেন শামীম ওসমান। এর কয়েকদিন পর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়াইয়ে আইভীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হন শামীম ওসমান। এতে করে দল তাকে অঘোষিত মনোয়ন দিলেও বিদেশের মাটির্তে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী মেয়র আসতে বলে মন্তব্যে করেন।
বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকার আমলে জেলা প্রশাসনের সাথে অমিল থাকলেই শামীম ওসমান জনসভা বা সমাবেশ ডাক দেয়া হত। এতে পুরো নারায়ণগঞ্জ জুড়ে তার সমর্থকদের উপস্থিতিতে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের শাসনের মত বক্তব্যে রাখতেন এমন মন্তব্যে করেছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম এমপি হন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে কায়সার হাসনাত, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে কবরী সারোয়ার ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নাসিম ওসমান। এদের মধ্যে টানা ক্ষমতায় ছিলেন গাজী, বাবু, কায়সার ও নাসিম ওসমান। তাদের প্রভাবে নির্বাচনী এলাকায় নেতা-কর্মীদের ছিলো উচ্ছাসিত। ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ সরকার উৎখাতের পর পালিয়ে যান নজরুল ইসলাম বাবু, কায়সার হাসনাত ও শামীম ওসমান। এরা বিগত বছরগুলোতে জন¯্রােতে নারায়ণগঞ্জবাসীকে কাপিঁয়ে দেয়া একাধিক সমাবেশ করেছে।
একই ভাবে বিএনপি রাজনীতিতে হারিয়ে গেছেন সংস্কার পন্থি নেতা হিসেবে সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম ও নাসিক নিবাচনে অংশ নেয়ায় বহিস্কার হন তৈমূর আলম খন্দকার। এক সময়ে তারাই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছিলেন সময়ে ধরে। এদিকে বিএনপির এমপি ও জেলার সভাপতি হয়েও ধরাশায়ীতে রয়েছেন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। মামলা ও গ্রেপ্তার ভয়ে ২০১৯ সালে রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করে নিশ্চুপ হয়ে যান শিল্পপতি শাহ আলম। তিনি ২০০৮ সালে নির্বাচনে কবরী সারোয়ার সাথে পরাজিত হন। এদিকে হত্যা মামলায় ২০০৩ সাল থেকে পলাতক জীবনে চলে যান ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান। ২২ বছর পর পলাতক ও কারাভোগের পর গত ১৩ এপ্রিল মুক্তি পেয়ে আলোচনা রয়েছে। এদিকে নির্বাচনী এলাকায় নজরুল ইসলাম আজাদ ও মোস্তাফিজুর রহমান দীপু ভুঁইয়া জনপ্রিয়তা রয়েছে তুঙ্গে। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বি নিজ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা রয়েছেন। এর ফলে নারায়ণগঞ্জে রাজনীতিতে নেতারা আসে যায়, এতে কর্মীরা নেতাদের স্রোতে থাকে।
আপনার মতামত লিখুন :