নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং ব্যবসায়ীদের যৌথ উদ্যোগের ফলে পবিত্র মাহে রমজান মাসে শহরে কিছুটা শৃঙ্খলা থাকলেও ঈদের পর থেকে নারায়ণগঞ্জ ফের চিরচেনা রুপ ধারণ করছে। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত দখল, অবৈধ অটোরিকশা, ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণে না আনায় শহরজুড়ে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজটের। নগরবাসীর ভাষ্য, রমজানের মাসের মতোন সড়কে কঠোরতা প্রয়োজন। একই সঙ্গে এর স্থায়ী সমাধানে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। শহরের তীব্র যানজটের কারণে নিতাইগঞ্জ থেকে চাষাঢ়া আসতে ১০ মিনিটের জায়গায় ৪০ মিনিট লেগে যাচ্ছে। তাই এই সমস্যার সমাধান খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
এর আগে অচল শহর সচল করার জন্য রমজান মাসে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার পাশাপাশি নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। অন্যদিকে, শহরের যানজট নিরসনে ১৮০জন স্বেচ্ছাসেবী সদস্যকে নিয়োগ দেন চেম্বার অব কমার্স কর্তৃপক্ষ। পুলিশের পাশাপাশি তাদের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতোন। একইদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের নিয়মিত টহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। তাই মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল তা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
গত ৩০ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যানজট নিরসনের লক্ষে সামাজিক, রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ছাত্র সংগঠনের নেতারা নারায়ণগঞ্জে যানজট সৃষ্টির বিভিন্ন কারণ জেলা প্রশাসকের নিকট তুলে ধরেন এবং সেসব সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রস্তাব করেন। পরবর্তীতে সবার সমস্যা শুনে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, শহরে ইজিবাইক অন্যতম সমস্যা। যদি এই ইজিবাইকগুলোকে মূল পয়েন্টগুলো থেকে ঘুরিয়ে দিতে পারি এবং ইজিবাইকগুলোকে যদি রোড অনুযায়ী কালার নম্বর করে দিতে পারি তাহলে একটা ভালো ফলাফল পেতে পারি', যোগ করেন তিনি। আগামী ৭ দিনের মধ্যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইজিবাইকগুলোতে রঙ করতে হবে। তাহলে লাইসেন্সের ইজিবাইকগুলো আলাদা করা যাবে। যদিও আপনারা (বক্তারা) বলছেন, ১৮ হাজার ইজিবাইক শহরে আর সিটি করপোরেশন বলছে, ৮ হাজার ইজিবাইকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। বাসমালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'চাষাঢ়া মোড়ে যাত্রী উঠানোর নামে প্রতিযোগিতা করে। এতে দুর্ঘটনারও শিকার হয়। যাত্রী কেন রাস্তা থেকে উঠাতে হবে? বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রী উঠাতে হবে, নাহলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে প্রশাসন। রাত দশটার পরে শহরে ট্রাক ঢুকবে।' মীর জুমলা সড়ক ও শায়েস্তা খাঁ সড়ক দুইদিনের মধ্যে মুক্ত করতে সিটি কর্পোরেশনকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেন ডিসি। একইসাথে রাস্তা ও ড্রেনের কাজ দ্রুত শেষ করার কথা বলেন তিনি।
আর গত ১ মার্চ নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি শহরের যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে শহরের যেসব পয়েন্টে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় ওইসব পয়েন্টে বাড়তি জনবলের ব্যবস্থা করেছেন। ২ মার্চ থেকে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে তারা কাজ শুরু করেন। চেম্বার অব কমার্স সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট চাষাঢ়া মোড়, মিশনপাড়া, গ্রীনলেন্স ব্যাংক মোড়, ২নং রেলগেইট, ১নং রেলগেইট, মন্ডলপাড়া, খানপুর, পঞ্চবটি এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট নিরসনে প্রত্যেকটি মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ, কমিউনিটি পুলিশ ও সঙ্গে ১৮০ জন সদস্য তাদের সহায়তা করার জন্য নিয়োজিত ছিলেন। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এবং দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ২টি টিম কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল। পরিচালকবৃন্দের সহায়তায় মনিটরিং সদস্য নিয়মিত কার্যক্রম তদারকি করে। যে কোন প্রকার সমস্যা সমাধানের জন্য মনিটরিং সদস্যদের মাধ্যমে ট্রাফিক বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চেম্বার থেকে সমাধানের চেষ্টা করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :