ওসমান পরিবারের সঙ্গে সখ্যতা, জমি দখলসহ একের পর এক অভিযোগ উঠেছে সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় অবস্থিত নীট কনসার্ন গ্রুপের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি, জমি দখলের প্রতিবাদ করায় ছাত্র-জনতার উপর হামলা করে নীট কনসার্ন গ্রুপের পালিত সন্ত্রাসীরা। এসময় তারা বোমা মেরে ছাত্রদের উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে। নীট কনসার্নের এমন ভূমিকায় জেলাজুড়ে চলছে নানা সমালোচনা। এর আগে, গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাদের বিরুদ্ধে আজমেরী ওসমানকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠে। যা নিয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি। এই ফ্যাক্টরির কারণে দীর্ঘদিন নাগিনা জোহা সড়ক আটকে ছিল। পরবর্তীতে ক্ষমতাবলে তাদের জমি উদ্ধার না করেই সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হয়। এছাড়া রেলওয়ের জমি দখল, ওসমান পরিবারের সন্ত্রাস ও প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে মিলের প্রায় ৫৫ কোটি টাকার মালামাল লুটপাট করার অভিযোগ আছে নীট কনসার্নের বিরুদ্ধে। মূলত নীট কনসার্ন গ্রুপের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা তার এসব অপকর্ম করার জন্য একটি শক্তিশালী সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করেছে। যাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জের কেউ কথা বলার সাহস পায় না। এর ফলে নীট কনসার্ন গ্রুপ এখন সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর গলার কাটাতে পরিণত হয়েছে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এক সমাবেশ কর্মসূচিতে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, ফ্যাসিবাদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালায় নাই। অনেককেই বিএনপি নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। লক্ষীনারায়ণ কটন মিলের ৭০০ কোটি টাকার সম্পত্তি ৩৫ কোটি টাকায় নিয়েছে নীট কনসার্নের জয়নাল, জাহাঙ্গীর এরা। তারা ওসমান পরিবারের সঙ্গে আঁতাত করে ৫ই আগস্টের পরে এই জাহাঙ্গীর আজমেরী ওসমানকে সাহায্য করেছে, আশ্রয় দিয়েছে। এখনো খুনীদের সহযোগী জাহাঙ্গীররা বহাল তবিয়তে রয়েছে।
এদিকে, শামীম ওসমানের সাথে আঁতাত করে শত শত কোটি টাকার ভ‚মিদস্যুতার অভিযোগ আছে নীট কনসার্ন গ্রুপের বিরুদ্ধে। শুধুমাত্র লক্ষী নারায়ণ কটন মিলস (যা বর্তমানে নিউ লক্ষী নারায়ণ কটন মিলস নামে পরিচিত) এর জায়গা দখল করার জন্যই ওসমান পরিবারকে প্রায় দশ কোটি টাকার মতো চাঁদা দিয়েছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এমনকি ওসমান পরিবারের সন্ত্রাস ও প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে মিলের প্রায় ৫৫ কোটি টাকার মালামাল লুটপাট করেছে বলেও অভিযোগ আছে নীট কনসার্নের বিরুদ্ধে। একই বছর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েই লক্ষী নারায়ণ কটন মিলসের শেয়ার হোল্ডারদের নীট কনসার্নের গুন্ডাবাহিনী মারধর করে বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। এর আগে নীট কনসার্নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা ও তার ছোট ভাই মনোয়ার হোসেন মোল্লা প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের পুত্র নারায়ণগঞ্জের ভাইজান খ্যাত আজমেরী ওসমান ও তার প্রায় ৩ থেকে ৪ শত গুন্ডাবাহিনী নিয়ে মিলের ভিতরে প্রবেশ করে সেখানে থাকা শেয়ার হোল্ডার ও তাদের পরিবারের উপর আক্রমণ করে। একই বছর নাসিম ওসমান ও সেলিম তৎকালীন বাজার মূল্য প্রায় ৭০০ কোটি টাকা হলেও মাত্র ৩৫ কোটি টাকায় নীট কনসার্নের হাতে দেন। তারা উপস্থিত থেকে দখল বুঝিয়ে দেওয়ারও দায়িত্ব নেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অবজ্ঞা করে দায়িত্ব নিয়ে গঠন করে দেন পরিচালনা পর্ষদ।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫৪ সালে ১৮ দশমিক ৬৭ একর জমি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার গোদনাইল এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় লক্ষী নারায়ণ কটন মিলস। যে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। তবে ’৯০ এর দশকের পর থেকে তৎকালীন পরিচালনা পরিষদের স্বেচ্ছাচারিতায় ধীরে এই লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি লোকসান দেওয়া শুরু করে। যারফলে ১৯৯৬ সালে মিলটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় সরকার। ২০০০ সালে সরকার গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে মিলের ৫১০ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে শেয়ারহোল্ডার ঘোষণা করে মিলটি চালানোর দায়িত্ব দেয়। এরপর মিলটি চালু করে আবারও লাভের মুখ দেখতে শুরু করে শেয়ারহোল্ডাররা। এরপরই এই মিলটি নীটকনসার্নের মালিকের চেখে পড়ে এবং মিলটি দখলের উপায় খুঁজতে শুরু করেন। ২০১১ সালে নিট কনসার্নের মালিক জয়নাল আবেদীন মোল্লা, জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা সেই সময়ের এমপি নাসিম ওসমানের মাধ্যমে ৪৫৮ জন শেয়ার হোল্ডারকে নিয়ে স্ট্যাম্পে এই বলে স্বাক্ষর নেন যে, তারা মিলের শেয়ারহোল্ডার থাকবেন।
সবশেষ গত ২০ এপ্রিল ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনা পর্যালোচনা করে জানা যায়, এদিন দুপুরে ১৮-২০ জন ছাত্র-জনতা ‘দখলমুক্ত নারায়ণগঞ্জ চাই, ভূমিদস্যুদের ঠাই নাই’ এমন ব্যানারে নীট কনসার্ন গ্রুপের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জমি দখলের অভিযোগ তুলে কারখানাটির সামনে মানববন্ধনে করেন। পরে মানববন্ধনকারীদের সরিয়ে দিতে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি একপর্যায়ে ধাওয়া দেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে বেশ কয়েকজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতৃত্বে থাকা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা হলে উত্তেজনা বিরাজ করে। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভাষ্য, তাদের জেলা কমিটির সংগঠক অনিক খন্দকারের অল্প কিছু সম্পত্তি নীট কনসার্নের মালিক জাহাঙ্গীর সাহেব দখল করেন। যা নিয়ে অনিকদের সঙ্গে কম্পানির ঝামেলা চলছিল। পরবর্তীতে অনিক তাদের সহযোগীদের কল করলে তারা ঘটনাস্থলে এসে তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। তখন পুলিশও ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিল। কথাবার্তার একপর্যায়ে পুলিশের সামনেই তাদের বোম মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় কম্পানি মালিকপক্ষ।
আপনার মতামত লিখুন :