নারায়ণগঞ্জে বেড়েছে উফশী (উচ্চ ফলনশীল) জাতের বোরো ধান চাষাবাদ। উৎপাদন বেশি হওয়ায় এবং পোকামাকড়ের আক্রমন কম হওয়ায় দিন দিন উচ্চ ফলনশীল জাতের বোরো ধান চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষক। নানাবিধ কারণে কৃষি জমি কমে যাওয়ায় ও অপর্যাপ্ত সেচ ব্যবস্থার কারণে চাষের জমি অনাবাদী থাকায় উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদেরকে উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলায় চলতি মৌসুমে বোরো চাষাবাদের জন্য ২০ হাজার ৪০২ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর। গত জানুয়ারি মাসে বোরো ধান চাষাবাদ শুরু হলেও ফেব্রæয়ারিতেও বেশ কিছু জমিতে বীজ রোপন করে কৃষকরা। ইতোমধ্যে বোরা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ১০ হেক্টর, বন্দর উপজেলায় ৫৫০ হেক্টর, সোনারগাঁ উপজেলায় ৫ হাজার ৬৯৪ হেক্টর, আড়াইহাজার উপজেলায় ৯ হাজার ১৬৫ হেক্টর ও রূপগঞ্জ উপজেলায় ৫ হাজার ৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ হচ্ছে। যার মধ্যে ব্রিধান ২৯ চাষাবাদ হচ্চে ৩৭০৪ হেক্টরে, ব্রিধান ২৮ চাষাবাদ হচ্ছে ২৭৯৮ হেক্টরে, ব্রিধান ৮৯ চাষাবাদ হচ্ছে ৩৬১৫ হেক্টরে ও ব্রিধান ৯২ চাষাবাদ হচেছ ২৩৫৮ হেক্টরে। এবছর ৩ হাজার কৃষককে বিঘা প্রতি ২ কেজি করে বীজ প্রনোদনা প্রদান করেছে সরকার। এছাড়াও প্রতি কেজি সারেও কৃষকদের ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। এপ্রিলের শেষ দিকে বোরো ধান কর্তন শুরু হবে যা চলবে মে মাস জুড়ে।
কৃষকরা জানান, ব্রিধান ২৮ ও ২৯ জাতের ধানে পোকার আক্রমন হয়। তারা চাষাবাদের বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। উচ্চফলনশীল জাতের ধানে অধিক ফলন হওয়ায় ও পোকার আক্রমন কম হওয়ায় এসব জাতের ধান চাষাবাদ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। প্রতি কাঠায় ফলন দেড় থেকে ২ মন পর্যন্ত হয়ে থাকে বলে তারা জানান। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ দেখা না দিলে এবছর ধানের ফলন ভাল হবে বলে প্রত্যাশা কৃষকদের। তারা সেচ কাজে প্রতিবন্ধকতা দূর করাসহ কৃষকদের উন্নত মানের বীজ সরবরাহে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
বন্দর উপ সহকারি কৃষি অফিসার কামরুজ্জামান সরকার জানান, কৃষি বিভাগ মূলত কৃষকদের ভাইদের ধানের উৎপাদন যেন বেশি হয় সেটি মাথায় রেখে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। পুরনো জাতের বোরো ধান আবাদ করে কৃষকরা ভালো ফলন পাচ্ছেন না। সে হিসেবে যে জাতগুলো থেকে ফলন বেশি আসবে, সে জাতগুলো মাঠে স¤প্রসারণের জন্য আমরা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করি। এ কারণে কৃষি বিভাগ নতুন নতুন জাতের উচ্চ ফলনশীল বোরো ধানের আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করছি। আশা করছি এবছর কৃষকরা ভাল ফলন পাবে।
বন্দর উপ-সহকারি কৃষি অফিসার হেদায়েতুল ইসলাম জানান, বোরো মৌসুমের জন্য নতুন জাত ব্রি-ধান ৮৮, ব্রি-ধান ৮৯, ব্রি-ধান ৯২, ব্রি-ধান ১০০, ১০১, ১০২, ১০৬ এই জাতগুলো আমরা কৃষকদের আবাদের জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। এগুলোর ফলন ভালো এবং রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম। সুষম সার ব্যবহারে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। ধানের এই জাতগুলো মাঠপর্যায়ে ব্যাপক বিস্তারের ফলে নারায়ণগঞ্জ জেলায় উৎপাদন বাড়বে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। সরিষা চাষের জন্য বোরো ধান চাষ দেরীতে শুরু হওয়ায় পোকার আক্রমন হয়েছে। রোগ প্রতিরোধে তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। এখন ধান গর্ভাবস্থায় এখন জমিতে পর্যাপ্ত পানি না দিলে ধান হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :