আমি তো কারও কোনো ক্ষতি করিনি। আমার বেলায় কেনো বার বার এমন হয়? আমার প্রত্যেকটা ছেলেই মেধাবী ছিলো। কর্মদক্ষতাও তারা পিছিয়ে ছিলো না। তারপরও তারা কেন এমন করলো? আমি মনকে কি বলে সান্তনা দিবো। কথাগুলো বলেই হু হু করে কান্না করছিলেন আব্দুল আজিজ। কোনোভাবেই যেন তার কান্না থামছিলো না।
বলা হচ্ছিলো নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর রেলস্টেশন এলাকার আব্দুল আজিজের কথা। গত ১৭ জানুয়ারি রাতে তার ছেলে মো. আব্দুর রহিম আত্মহত্যা করে মারা যান। মো. আব্দুর রহিম বুয়েটের ওয়ার্কশপে চাকরি করতেন এবং তার তিন ছেলে সন্তান রয়েছে।
এর আগে ১৯৯৯ সালে তার ছেলে রফিকুল ইসলাম রুবেল আত্মহত্যা করে মারা যান। একই সাথে ২০১৮ সালে তার আরেক ছেলে সাকিবুল ইসলাম সাকিব আত্মহত্যা করে মারা যান।
এভাবে একের পর এক তিন ছেলের অনাকাংখিত মৃত্যুর ঘটনায় আব্দুল আজিজ এবং তার স্ত্রী রাহেলা দুইজনেই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। স্বাভাবিক মৃত্যু হলে সেটা মেনে নেয়া গেলেও এই অনাকাংখিত মৃত্যুকে তারা মেনে নিতে পারছেন না। সেই সাথে তিনি ছেলেই যথেষ্ট শিক্ষিত কর্মদক্ষ ছিলেন। তারপরও তাদের এই আত্মহত্যা বাবা আব্দুল আজিজ এবং মা রাহেলা দুইজনকেই বিষিয়ে তুলেছে। বেঁচে থেকেও তারা যেন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।
এদিকে অনেক্ষণ পর বাবা আব্দুল আজিজের কান্না থামে। এরপর তিনি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলেন, এলাকায় কেউ আমার ছেলেদের নামে খারাপ কিছু বলতে পারবে না। জানাযাতেও অনেক লোক উপস্থিত হয়েছিলো। তারপরও কেন যে ছেলেরা এভাবে মারা গেলো কোনো কারণ খুঁজে পাই না। সবশেষ আব্দুর রহিম নামে যে ছেলেটা মারা যায় তার সম্পর্কে এলাকার অনেকেই বলেছে তাদের সহযোগিতা করতো।
আব্দুল আজিজ বলেন, আমার সংসারে পারিবারিক কোনো সমস্যা ছিলো না। আমাদের ছেলে-মেয়েদের কোনো রকমের বৈরী সম্পর্ক ছিলো না। তাদের মধ্যে অনেক মিল ছিলো। সম্পত্তি নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব ছিলো না। বোনেরা স্ব-ইচ্ছায় ভাইদেরকে সম্পত্তি দিয়ে দিয়েছে। সবশেষ সেদিন এই ঘটনায় সেদিনও সব ভাই-বোনেরা একসাথে হয়েছিলো। রান্না-বান্না হয়েছিলো সবাই মিলে খাওয়া ধাওয়া করবে। কিন্তু তার আগেই একটা বড় ঘটনা ঘটে গেলো।
মারা যাওয়ার কি কারণ থাকতে পারে সে সম্পর্কে তবে আমার এই আব্দুর রহিম এই ছেলেটা কিছুটা হতাশাগ্রস্থ ছিলো। সে আসলে দিলখোলা ছিলো। যার কারণে মানুষজন তার কাছ যা চাইতো সবই সে দিয়ে দিতো। এই দিতে গিয়ে সে কিছুটা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ে। এইজন্যই এইভাবে মারা গেছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ হয়। কেউ কেউ আবার বলছেন অতী এখানে কোনো কিছুর আছর থাকতে পারে। যে কারণে আমার একের পর এক করে তিনটা ছেলে মারা গেছে।
আব্দুর রহিমের মা রাহেলা বেগম বলেন, আমার তিন ছেলেকে হারিয়ে আমরা একা হয়ে পড়েছি। অনেক সময় আমার এখানে এসে আত্মীয় স্বজনরাও থাকতে চাই না। সারাদিন আমরা একা বাড়িতে থাকি। আমাদের তো আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। মেয়েরা তাদের সংসার নিয়ে থাকে। আমার ছেলেদের স্ত্রীরাও অনেক ভালো ছিলো। তারপরও আমার এই ছেলেটা কেন এমন হলো সেটাই মনকে মানাতে পারছি না।
অন্য দুই ছেলের মৃত্যু সম্পর্কে আব্দুর আজিজ বলেন, রফিকুল ইসলাম রুবেল নামে যে ছেলেটা সে বা হাতি খেলোয়াড় ছিলো। খেলাধূলায় তার অনেক পরিচিতি ছিলো। পাশাপাশি সে লেখক ছিলো। যে কোনো বিষয়েই কবিতা লিখতে পারতো। এছাড়াও আরও বহু গুণের অধিকারী ছিলো। তারপরও আমার এই ছেলেটা আত্মহত্যা করলো। আত্মহত্যার আগে এলাকায় একটি মারামারি হয়েছিলো। সেই মারামারির ঘটনায় মামলা হয় সেই মামলায় তাকে আসামী করা হয়েছিলো। এরপর থেকেই তে হতাশাগ্রস্থ ছিলো।
সাকিবুল ইসলাম সাকিব নামে যে ছেলেটা মারা যায় সে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার ছিলো। সে অনেক মেধাবী ছিলো। এই ছেলেটাও আত্মহত্যা করে। মারা যাওয়ার আগে সে একটা মেয়েকে পছন্দ করতো। এই মেয়েকে সে বিবাহ করেছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে মেয়েটি তাকে ছেড়ে চলে যায়। এরপরই সে এই ঘটনা ঘটায়। আমি আমার তিন ছেলেকে হারিয়ে অসহায়। আমার স্ত্রীও তার ছেলেদের হারিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছে।
আপনার মতামত লিখুন :