৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে আলোচিতদের একজন মাসুদুজ্জামান যিনি মডেল গ্রুপের কর্ণধার। স্থানীয়ভাবে তিনি ‘মডেল মাসুদ’ নামেই বেশী পরিচিত। নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, জেলা ক্রীড়া সংস্থা সহ বিভিন্ন দপ্তরে পদচারণার কারণে আলোচনায় আসা এ ব্যবসায়ী সমালোচিত হয়ে উঠেন একটি গোলটেবিল বৈঠককে কেন্দ্র করে। নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ‘আমার নারায়ণগঞ্জ’ ব্যানারে গোলটেবিলের সমন্বয়ক মাসুদুজ্জামানের বক্তব্যে উঠে আসে মূল লক্ষ্য। উন্নয়নের আলোচনার চেয়ে প্রাধান্য পায় বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, আলোচকদের তির্যক মন্তব্য আসে আরেক শিল্পপতি ‘কিং মেকার খ্যাত’ মোহাম্মদ আলী সম্পর্কে। এ দুইজনকে ডুবাতে গিয়ে এবার চেম্বারের নির্বাচনে নিজেই ঝরে গেলেন মাসুদুজ্জামান। পরিচালক পদে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার পর যখন নিশ্চিত সভাপতির পথে তখন তিনি সে পথ পরিত্যাগ করেছেন।
বিষয়টি এখন নারায়ণগঞ্জে টক অফ দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, মোহাম্মদ আলী ও হাতেমকে ডুবাতে গিয়ে নিজেই ঝরে গেলেন সম্ভাবনাময় ব্যবসায়ী মাসুজ্জামান যার ঘনিষ্ঠজনেরা মনে করেন আগামীতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র কিংবা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর।
৬ ফেব্রুয়ারী চেম্বারর নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড ১৯ পরিচালকের বিপরীতে ১৯ জনের নাম ঘোষণা করেন। ২৭ প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও একজন জমা দেয়নি। পরে ২৬ জনের মধ্যে ৭জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন যাদের মধ্যে মাসুদুজ্জামান রয়েছেন।
৬ ফেব্রুয়ারী ঘোষণা দিলেও ৫ ফেব্রুয়ারী বিকেলেই বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়। সেদিন মাসুজ্জামানের পক্ষে তার কারখানার জিএম ও তদারক মনির হোসেন প্রত্যাহার পত্র এসে চেম্বারে জমা দেন। মুহূর্তের খবর সর্বত্র আলোচনার সৃষ্টি হয়। দেখা দেয় ধোঁয়াশা।
চেম্বারের একাধিক নির্বাচিত পরিচালক জানান, ৫ আগস্টের পর যখন চেম্বারে অচলাবস্থা দেখা দেয় তখন এগিয়ে আসেন মোহাম্মদ আলী। এর মধ্যে চেম্বারের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল ও সহ সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু পদত্যাগ পত্র জমা দেন। জেলা প্রশাসকের এক ঘরোয়া সভায় তখন মাসুদুজ্জামানের নাম প্রস্তাব করেন মোহাম্মদ আলী। এর পরেই বিকেএমইএ এর এক সভায় গিয়ে হাজির হন মোহাম্মদ হাতেম। তিনি অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে মাসুদুজ্জামানকে কো অপ্ট করিয়ে সভাপতির প্রস্তাব দিলে সকলে সম্মতি দেন তখন উপস্থিত পরিচালকদের সকলে।
এর পর থেকেই তিনি আলোচনায় আসেন। চেম্বারে একাধিক মতবিনিময় সভা করে তিনি নারায়ণগঞ্জের সামগ্রিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচিত হন তিনি চেম্বারের নামে নেওয়া ৮ লাখ টাকা চাঁদার টাকা ফেরত দিয়ে। তবে কারা সেই চাঁদাবাজী করেছিল সে নাম প্রকাশ না করেও বিতর্কের জন্ম দেন মাসুদ।
চেম্বারের দুটি দৃশ্যমান সভায় গণমাধ্যকর্মীদের উপস্থিতিতে হাতেমকে বেশ কদর করতে দেখা যায় মাসুদুজ্জামানকে। তবে হঠাৎ করেই যেন ছদ্মপতন ঘটে।
কোন এক গোষ্ঠীর প্ররোচনায় দুইজনের সম্পর্কে ফাটল ধরতে শুরু করে। সেটা প্রতীয়মান ঘটে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক গোলটেবিল বৈঠকে।
সেদিন উপস্থিত বেশীরভাগ সদস্য হাতেম ও মোহাম্মদ আলী সম্পর্কে বিষোদগার করেন। মাসুদুজ্জামান নিজেও হাতেমকে ভর্ৎসনা করেন। পরিস্কার হয়ে যায় বিরোধ।
এর মধ্যে চেম্বারের তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনের ডামাঢোল বাজতে থাকে। মাসুদুজ্জামান নিজে একের পর এক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ থেকে বিরত রাখেন। তার পরেও ১৯ জনের বিপরীতে ২৭ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
এখানে উল্লেখ্য, এ ২৭ জনের মধ্যে ৮জন ছিল বিগত কমিটির পরিচালক। তারা এবারও পরিচালক পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলে মাসুদুজ্জামানকে। কারণ ১৯ পরিচালকের ভোটে সভাপতি, সিনিয়র সহ সভাপতি ও সভাপতি নির্বাচিত হবেন। ফলে এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাওয়া নিয়ে সন্দিহান ছিলেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করতে তিনি বার বার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া আগ্রহীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু দোদুল্যমান থাকায় নিজেকে গুটিয়ে নেন মাসুদুজ্জামান।
ব্যবসায়ীরা মনে করেন, এ আশঙ্কা থেকেই এবার নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন মাসুদুজ্জামান। কারণ তখন সভাপতি হতে না পারলে নিজের অবস্থানগত বিষয়টিও তলানিতে ঠেকতো। যদিও চেম্বারের সভাপতি হতে না পেরে এরই মধ্যে একধাপ পিছিয়ে গেলেন মাসুদুজ্জামান।
আপনার মতামত লিখুন :