সারাদেশের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতেও কম নয় বহিষ্কৃত নেতাদের সংখ্যা। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে একে একে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন এটিএম কামাল, আতাউর রহমান মুকুল, শওকত হাসেম শকু এবং ইকবাল হোসেনসহ নারায়ণগঞ্জের আরো বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় বিএনপি নেতা।
মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দাবি, এটিএম কামাল, মুকুল, শকু এবং ইকবালরা এখন বহিষ্কৃত এবং সাবেকদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন বটে। কিন্তু যেই ছোট অপরাধের কারণে আজ তারা দল থেকে বহিষ্কৃত সেই অপরাধ দূরে রাখলে দলের জন্য তাদের আত্মত্যাগও কম নয়। বহিষ্কৃতদের মধ্যে অনেকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন। তখন তারা পুলিশের মারধর আর নির্যাতনের শিকারও হন। তাই এখন পুরানো সেই স্মৃতি সঙ্গে নিয়েই বেঁচে আছেন তারা।
জানা গেছে, বহিষ্কৃত নেতাদের কেউ চলে গেছেন প্রবাসে। আর যারা দেশেই আছেন তারা ৫ আগষ্টের পর থেকে চরম মানসিক যন্ত্রণা আর মনের দুঃখকে সঙ্গে নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। অপেক্ষায় আছেন কবে আবারো তাদের নিজ দল বিএনপিতে ফিরিয়ে নেয়া হবে। যেই দলের জন্য জীবনের বড় একটি সময় ব্যায় করেছেন সবাই।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তৈমূর আলম খন্দকার যখন অংশ নিয়েছিলেন তখন দলের নির্দেশনা অমান্য করে তার সঙ্গী হয়েছিলেন এটিএম কামাল। এই অপরাধে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয় এটিএম কামালকে। এক সময়ের রাজপথ কাঁপানো এই নেতা এখন প্রবাসে। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে যার বেশি ভাগই করিয়েছিলেন শামীম ওসমান। এমনকি তার একমাত্র ছেলেকেও পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হয় তখন।
মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুলকে সবশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে কি কারণে দল তাকে বহিষ্কার করলো সেটির কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি বহিষ্কারাদেশের চিঠিতে।
বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, আতাউর রহমান মুকুল বিগত ১৫ বছর বিএনপির সকল দলীয় কর্মসূচী সফল ভাবে সম্পন্ন করেছেন। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা বিভিন্ন সময় আন্দোলন করতে গিয়ে জেলে গেছেন তাদের আইনী সহায়তা দিয়েছেন। এছাড়া তিনি নিজেও গত ৫ আগষ্টের আগে-পরে অসংখ্য রাজনৈতিক মামলার শিকার হয়েছেন।
জানা যায়, মুকুলের সাথে একই অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছিলো মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত হাসেম শকুকে। বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিনিও এক সময় দলের জন্য নানান ত্যাগ শিকার করেছেন।
বিলুপ্ত পৌরসভায় কমিশনার ও সিটি করপোরেশনের তিনটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দোর্দাণ্ড দাপট নিয়ে তিনি যেমন জিতেছেন তেমনি বিগত সময়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনেও ছিলেন সামনের সারির একজন দক্ষ ফাইটার। আর সে কারণেই ২০০৮ সালের পর থেকে তাকে পোহাতে হয়েছিল অত্যাচার আর নির্যাতনের এক ভয়াবহ খড়গ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বার বার গ্রেপ্তার, বিশেষ সেলে নিয়ে নির্যাতন এমনকি শীতের কনকনে রাতে আঁধারে সাদা পোশাকের কতিপয় দুর্বুত্তরাও বাড়িতে হানা দিয়ে গুমের চেষ্টা করেছিল। নারায়ণগঞ্জে ভয়াল ১৬ জুনের সেই আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলার মামলাতেও শুধু জড়ানো হয়নি বরং চার্জশীট দিয়েও এক মানসিক যন্ত্রনায় রাখা হয়েছে। অথচ ওই মামলায় যেসব বিএনপি নেতাকর্মীদের শুরুতে বিবাদী করা হয়েছিল তাদের কেউ আপস, কেউ বা সমঝোতা করে রেহায় পেয়ে গেছেন বহু আগে। কিন্তু শহরের উত্তরাঞ্চলের দোর্দণ্ড ও জনপ্রিয় কাউন্সিলর থাকাতেই কেবল শকুকে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে এমন অভিযোগ অনেকের। এলাকাবাসী বলছেন, ২০০৮ হতে অদ্যাবধি নির্যাতনের আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছেন শকু।
এছাড়া, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সম্প্রতি এক বাস চালককে মারধর এবং একই বাসে থাকা এক সাংবাদিককে লাঞ্চিত করার অভিযোগে বিএনপি থেকে বহিষ্কার হন। তবে এর আগে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সিদ্ধিরগঞ্জ এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিএনপি সকল আন্দোলন সংগ্রামে সামনের সারিতে ছিলেন ইকবাল।
আপনার মতামত লিখুন :