আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতিকরণে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ডেভিল হান্ট ও অন্যান্য অভিযান জোরালোভাবে পরিচালনা হওয়ায় বেকায়দায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ১০ দিনে ৩ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এর ফলে ফেরার রাস্তা খোঁজা আওয়ামী লীগ বর্তমানে গ্রেফতার ঝুঁকিতে রয়েছে।
তাদের এখন রাজপথ বাদ দিয়ে শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সরব দেখা যায়। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভাষ্যমতে, জুলাই-আগস্টে গণহত্যা নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নাই। বরং তাদের মধ্যে প্রতিশোধপরায়নতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই আচরণে সাধারণ মানুষের প্রতি তাদের গ্রহণযোগ্যতা যেমনিভাবে আরও কমছে তেমনিভাবে তাদের ফেরার রাস্তার সংকুচিত হচ্ছে।
সাধারণ মানুষের মতে, পূর্বের অপকর্মের জন্য তারা অনুতপ্ত না হলে এর খেসারত তাদেরই দিতে হবে। তারা আর কখনো রাজনীতিতে কামব্যাক করতে পারবে না। তাদের উচিত অতীতের জন্য ক্ষমা চেয়ে রাজনীতির ধরণ পরিবর্তন করে রাজপথে ফেরা।
এদিকে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও নিজ নিজ এলাকা থেকে পালিয়ে যান। পাশাপাশি অনেক প্রভাবশালী নেতা কৌশলে দেশের বাহিরে চলে যান। তবে বিপদে রয়েছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অভিযানে প্রতিনিয়ত পুলিশ কঠোর ভূমিকা রাখছে। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরই নয় অপরাধীদের বেছে বেছে গ্রেফতার করা হচ্ছে। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না। তবে নিরীহ কেউ যেনো হয়রানীর শিকার না হয় সেদিকে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতায় ছাত্র-জনতার মৃত্যুর ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় একের পর এক মামলা দায়ের হয়। এর ফলে মামলা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এই পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের ৭টি থানায় ১০০ বেশি মামলা দায়ের হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে। তার আগে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অধিকাংশ নেতাকর্মী নারায়ণগঞ্জের বাহিরে রইলেও এখনো কিছুসংখ্যাক নেতাকর্মী জেলাতেই অবস্থান করছেন। মামলা, গ্রেফতার থেকে বাঁচতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এভাবে কতদিন পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে থাকতে হবে তা এই মুহূর্তে বলা অসম্ভব বিষয়। দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকার পর পতনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের এই দশা হলে তা কখনো কল্পনা করেনি নেতাকর্মীরা। এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শোকদিবস পালন করার কথা থাকলেও বিএনপিসহ অন্যান্য দলের রাজপথে শক্ত অবস্থানে থাকার কারণে তাদের শোক পালন করতে দেখা যায়নি।
জানা যায়, স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ম্যানেজ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চেয়েছিলেন ১৫ আগস্ট শোকদিবস পালন করার। তবে কেন্দ্রঘোষিত টানা তিনদিন ব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিন থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীরা অলি গলিতে কঠোর অবস্থানে থাকার হুশিয়ারি দিলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। এর আগে বিরোধী দলে থাকা অবস্থাতেও কখনো তাদের এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি।
এদিকে পলাতক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখনো নিজ এলাকায় প্রবেশ করতে ভয় পাচ্ছেন। তাদের মধ্যে এখনো হামলার আতঙ্ক কাজ করছে। তাই আতঙ্কিত হয়ে তারা পরিবার নিয়ে বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :