News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

৪ ইউপি চেয়ারম্যান নিয়ে বিএনপিতে গুঞ্জন


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম ৪ ইউপি চেয়ারম্যান নিয়ে বিএনপিতে গুঞ্জন

নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলার আলোচিত চার চেয়ারম্যানকে মহানগর বিএনপি নেতাদের নামে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এদের মধ্যে একজনকে রোববার গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে আলোচনা গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।

জানা গেছে, আওয়ামীলীগ-জাতীয় পার্টির এই চার চেয়ারম্যান বিগত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছে। এদের আলীরটেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (নৌকা প্রার্থী) জাকির হোসেনের পক্ষে ইতোমধ্যে মহানগর বিএনপি দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতার বক্তব্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে। এর পর দিনই বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান (লাঙ্গল) গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের পিছনে বিএনপি নেতাদের কারিশমা রয়েছে বলে অভিযোগ করে তার সমর্থকরা।

এদিকে এলাকায় প্রকাশ্যে থাকা সত্তের্¡ও এখনো গ্রেপ্তার হয়নি বন্দর উপজেলা পরিষদ ও মুছাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন। নির্বাচিত এলাকায় খেলাধুলা ও ওয়াজ মাহফিলে প্রকাশ্যে বক্তব্যে রাখলেও জেলা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার না করায় সমালোচনা শুরু হয়েছে। একইভাবে গ্রেপ্তার হয়নি সাবেক এমপি সেলিম ওসমান শ্যালক খ্যাত বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানউদ্দিন চৌধুরী।

এই চার চেয়ারম্যানকে প্রভাবশালী করার পিছনে সর্বোচ্চ হাত রয়েছেন জাতীয় পার্টির তিনবারের সাবেক এমপি সেলিম ওসমানের। ওসমান পরিবারকে ভর করে বন্দর উপজেলা এলাকাগুলোতে চষে বেড়িয়েছে তিন চেয়ারম্যান।

সদরে আলীরটেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতিকে বসিয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বি জাকির হোসেনকে নৌকা প্রার্থী করেন ওসমান পরিবার। এক সময় বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতা অভিযোগ ছিলো জাকিরের বিরুদ্ধে। অদৃশ্য কারণে তাকে নৌকা মাঝি করায় ওই সময় আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি হয়।

জানা যায়, আওয়ামীলীগ সরকার আমলে সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন জাকির হোসেন, বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার প্রধান, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন চৌধুরী এবং বন্দর উপজেলা পরিষদ ও মুছাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন নির্বাচিত হন। তারা বিগত ১৫ বছর ধরে স্থানীয় এমপি নাসিম ওসমান ও সেলিম ওসমানের আস্থাভাজন হওয়ার বন্দর উপজেলা অংশে প্রভাবশালী চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত লাভ করে। এর কারণে বিগত বছরগুলোতে বন্দর থানা ও উপজেলা কোন এলাকায় সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে পারেনি বিএনপি। চেয়ারম্যানদের আরেক আস্থাভাজন বা নিয়ন্ত্রণকারী ছিলেন বিএনপি বহিস্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল। তিনি বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে পাচঁটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও নাসিক ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের হোতা ছিলেন। বিএনপি এই নেতা মুকুল পরপর দুইবার বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ওসমানদের উপর ভর করে। পরবর্তিতে ২০২৪ সালের ৮ মে ওসমান বিরোধীতা থাকায় মুকুল ভোটে তৃতীয় সংখ্যা আটকিয়ে পড়েন।

গত বছর ৮ মে আলোচিত বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের উপজেলা সভাপতি আব্দুর রশিদ ও বিএনপি বহিস্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুলকে হারিয়ে জয়ী হন জাতীয় পার্টি জেলা সহ-সভাপতি মাকসুদ হোসেন। তিনি সদ্য মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থী হন। আলোচিত মাকসুদ হোসেন স্থানীয় সাবেক এমপি সেলিম ওসমানের আস্থাভাজন হওয়ায় বন্দরের একাংশ প্রভাব বিস্তারে ছিলো সমালোচিত। মুছাপুরের চেয়ারম্যান থাকতে বিএনপি নেতা মুকুল ও আওয়ামীলীগ নেতা রশিদের পিছনে কাতারে দেখা যেত মাকসুদ হোসেনকে। পুলিশকে মেরে আলোচনা আসেন মাকসুদের কুখ্যাত সন্তান শুভ। অয়ন ও আজমেরি ওসমানের দাপটে পুরো মুছাপুর ছিলো ত্রাসের এলাকা। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পরও এলাকায় খেলাধুলা ও ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে উপস্থিত থেকে বক্তব্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা আন্দোলনের একাধিক মামলা থাকা সত্তের্¡ও গ্রেপ্তার হননি। মহানগর ও বন্দর থানা বিএনপি নেতাদের সাথে যোগাযোগ বহাল রাখার কারণে তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চোখে পড়ছে না বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

একই অবস্থায় স্ব-এলাকায় রয়েছেন সেলিম ওসমানের শ্যালক বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানউদ্দিন চৌধুরী। বিএনপি বহিস্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুলের আস্থাভাজন হওয়ার তাকে গ্রেপ্তার হচ্ছে না। গত রোববার রাতে বিএনপি জালে আটকিয়ে পড়েন জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান। বিভিন্ন অপরাধের জর্জরিত দেলোয়ার প্রধান গ্রেপ্তার হওয়ার বন্দর থানা পুলিশ বাহবা পেলেও অন্য চেয়ারম্যানকে ছাড় দেয়া সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, আলিরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন একজন ভালো মানুষ। তার বিরুদ্ধে বিগত সরকার মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়েও তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দেয়া হয়েছে। প্রশাসনকে বলবো ষড়যন্ত্রমূলক মামলা যেনো না দেয়া হয়। জাকির চেয়ারম্যান এলাকার উন্নয়ন করেন, এলাকার মানুষ তাকে ভালোবাসে।

মহানগর বিএনপি নেতা টিপুর এমন বক্তব্যে তুমুল আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। জাকির হোসেন গত নির্বাচনে নৌকা প্রার্থী হয়ে আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। ৫ আগষ্টের পর জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার দাবিতে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে আলীরটেক ইউনিয়ন বিএনপি নেতা-কর্মীরা মানববন্ধন ও মিছিল করেছিলো। এই ছয় মাসের ব্যবধানে আলাউদ্দিন চেরাগে ঘষায় জাকির হোসেন ভালো মানুষ ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা আসামী করা হয়েছে বলে মন্তব্যে করেছেন বিএনপি নেতা। প্রায় সময় আওয়ামীলীগের দোসরকে সাথে কোন সমঝোতা বা মাথানত না করার ঘোষনা দিয়েছিলেন টিপু।

Islam's Group