News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ০৯ এপ্রিল, ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১

বিএনপির সভাপতি ও সেক্রেটারী বানানোর নেপথ্য কারিগর


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৫, ০৯:৩৯ পিএম বিএনপির সভাপতি ও সেক্রেটারী বানানোর নেপথ্য কারিগর

নারায়ণগঞ্জে এক সময়ে বিএনপির নিয়ন্ত্রক ছিলেন শিল্পপতি শাহ আলম। তাঁর ইশারাতে হতো বিএনপির কমিটি। অনুসারীরা প্রচার করতেন শাহআলমের টাকায় গুলশানে বিএনপির কার্যালয়ের অনেকের বেতন হতো। সুসম্পর্ক ছিল আওয়ামী লীগের পলাতক সাবেক এমপি শামীম ওসমান সহ অন্যদের সঙ্গে। সে কারণেই বিগত সময়ে খুব একটা মামলার আসামী হতে হয়নি তাঁকে। ২০১৮ এর নির্বাচনের পর নিজেকে আড়াল করে নেন তিনি। পুরোদমে মনোযোগ দেন ব্যবসায়। তবে এবার তিনি ফের উদয় হয়েছেন সুসময়ে। আর উদয় হয়েই জানিয়েছেন নিজের সেই পুরাতন ক্ষমতার কথা।

ঈদ উল ফিতর উপলক্ষ্যে ফতুল্লায় নিজ বাসভবনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। ওই সময়ে জানিয়ে দেন তাঁর সেই পুরাতন ক্ষমতার বিষয়টি।

বিগত দিন নিস্ক্রিয় থাকার বিষয়ে বলেন, আন্দোলনে গেলে গ্রেপ্তার হতে হবে নির্যাতিত হতে হবে। তাই আমি কাউকে তেমন কিছু বলিনি। অনেকে বলেছে আন্দোলনের সময় দিকনির্দেশনা দেন। আমি বলেছি ওয়েট করো। কারণ আমি দেখছিলাম তখন কি হচ্ছিল। আমি যদি বলি মিছিল নিয়ে নামো ভাঙচুর করো। ও তো মামলা খাবে এরেস্ট হবে। আমি উস্কানি দিলে তো ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হত। এতে ক্ষতি দলের, আমার ক্ষতি হত না। ক্ষতি তোমাদের, আমি তা হতে দেইনি। নেতারা অসন্তুষ্ট হয়েছে এর জন্য আমার ওপর। কিন্তু আমি তো এটা চাই না।

তিনি বলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি সেক্রেটারি আমার কাছে কোন ফ্যাক্ট না। নারায়ণগঞ্জে তৈম‚র আলম খন্দকারকে আমি জেলার সভাপতি বানিয়েছি। কাজী মনির সাহেবকে জেলার সভাপতি আমি বানিয়েছি। মামুন মাহমুদকে জেলার সেক্রেটারি আমি বানিয়েছি। এগুলো আমার কাছে সাবজেক্ট না। আমি এগুলো হতে চাই না।

২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে সারাহ বেগম কবরীর কাছে ২৪শ ভোটে পরাজিত হন শাহ আলম। আগামী নির্বাচনেও তিনি চাইলে মনোনয়ন পাবেন স্পষ্ট জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, আমি শাহ আলম নির্বাচন করলে নমিনেশন নেয়ার ক্ষমতা কারও নেই। নির্বাচন আমি করবো, আমাদের নির্বাচন আমরাই করবো। আমি সন্ত্রাসীদের নিয়ে রাজনীতি করবো না। ৫ আগষ্টের পর অনেকে আমাকে ডেকেছে। আমি বলেছি সময় আসুক।

প্রসঙ্গত এক সময়ে কল্যাণ পার্টির রাজনীতিতে জড়ান শাহ আলম। ওয়ান এলেভেনের সময়ে কল্যাণ পার্টিতে দুই হাত ভরে অনুদান দিয়েছেন। সেই পার্টির নেতা সব শেষ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে বেঈমানী করে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে এমপি নির্বাচিন হয়েছেন। শাহআলম পরবর্তীতে যুক্ত হন বিএনপিতে। টার্গেট ছিল এমপি হওয়া। ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েও আওয়ামী লীগের সারাহ বেগম কবরীর কাছে ধরাশয়ী হন। পরবর্তীতে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও কয়েক বছর আগে আন্দোলনের সময়ে পদ ছেড়ে দেন। মাঝে খবর নেয়নি কারো। বিএনপির সঙ্গে ছিল না কোন ধরনের হৃদ্যতা। এখন দলের সুসময় তাই তিনি ফের উদয় হওয়ার চেষ্টা করছেন।

২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির তৎকালীন সহ সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি নেন শাহ আলম। জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলেও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে বহাল রয়ে যান শাহ আলম। তবে তিনি জেলা বিএনপি ছেড়ে দিলেও নিয়ন্ত্রণ ছাড়েননি।

২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণার পরই বাণিজ্যকরণের অভিযোগ উঠেছিল। ২৬ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠনের এক মাস পেরুতে না পেরুতেই জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের ১৮ লাখ টাকা মূল্যের নতুন একটি প্রাইভেটকার কেনার সংবাদ প্রচার হয়। সেবার শাহ আলমের ইচ্ছেতে এক রাতের মধ্যেই ফতুল্লা থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেছিলেন মামুন মাহমুদ। এর আহবায়ক করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ ঘেঁষা আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসকে।

তার আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে শাহ আলম চেয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচন করতে। বিএনপির টিকেটে নির্বাচন করবেন বলে দলের পেছনে অর্থ বিত্ত ব্যয় করেছিলেন। কিন্তু ২০ দলীয় জোটের শরীক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচনের আগেই স্বপ্নভঙ্গ হয় শাহ আলমের। এতে করে দলের বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন শাহ আলম। এর মধ্যে মামলায় জড়িয়ে পড়ায় কেন্দ্রীয় বিভিন্ন নেতাদের সাথে ম্যানেজ করে তিনি জেলা ও থানার পদ থেকে অব্যাহতি নেন। তবে কেন্দ্রীয় পদে ঠিকই রয়ে যান তিনি।

জানা যায়, বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি শাহ আলমের কোন অংশগ্রহণ ছিল না। রাজপথে নেয়া দলীয় কোন কর্মসূচিতেই তার অংশগ্রহণ থাকতো না। মাঝে মধ্যে ঘরোয়া কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে থাকলেও সেটা খুব বেশি সময়ের জন্য না। এমনকি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতেও শাহ আলমের সক্রিয় কোন ভূমিকা ছিল না। তার অবস্থা অনেকটা ‘কিতাবে আছে গোয়ালে নেই’ প্রবাদের মতো।

২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর শহরের আলী আহমেদ চুনকা পৌর মিলনায়তনে জেলা বিএনপি'র সর্বশেষ সম্মেলনে তৈমূর আলম খন্দকারকে সভাপতি ও কাজী মনিরুজ্জামানকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি'র সাধরণ সম্পাদক করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৭ বছরেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে না পারায় ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামানকে সভাপতি ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি আলোর মুখ না দেখায় সাড়ে ৩ বছর পর জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে পুনরায় অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে আহবায়ক ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। নির্দেশনা ছিল ৩ মাসের মধ্যে থানা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলেও এই আহবায়ক কমিটি সবগুলো ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে পারেনি। এর মধ্যে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে মেয়র নির্বাচন করায় তৈমূর আলমকে আহবায়কের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক করা হয় মনিরুল ইসলাম রবিকে।

Islam's Group