সকাল থেকে গভীর রাত অবধি শত শত গাড়ি আসছে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগে আখড়া এলাকাতে। গাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ঢল এখন ওই বাড়ি ঘিরে। সেখানেই বসবাস করছেন জাকির খান। গত রবিবার ১৩ এপ্রিল তিনি জামিনে মুক্ত হন। এর পর থেকেই মানুষের ঢল অব্যাহত আছে। কেউ আসছেন মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে, কেউ বা ফুলের তোড়া নিয়ে। সিড়ি বেয়ে একে একে ঢুকছেন জাকির খানের ফ্ল্যাটে। তিনিও চেষ্টা করছেন সকলের সঙ্গে দেখা করতে, কথা বলতে। আবদার একটাই ছবি তোলা। জাকির খানও কাউকে নিরাশ করছেন না। তোলা হচ্ছে একের পর এক ছবি।
অনুসারী ও পরিবারের লোকজন বলছেন, মানুষের স্রোত বয়ে যাচ্ছে খান সাহেবের বাড়িতে। তার বাড়ি এখন জমজমাট। বিএনপির বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীরা ভীড় করছেন বাড়িতে। আসছেন ব্যবসায়ী সহ অনেকেই। কেউ কেউ মনে করছেন নিজেদের শক্তি বাড়ানোর টার্গেট করেই জাকির খানের কাছে ভিড়ছেন কেউ কেউ। তাদের মতে জাকির খানের পুরাতন সেই অবস্থানকে কাজে লাগানো।
পরিবারের এক সদস্য জানান, তাদের প্রতিদিন হিমশিম খেতে হচ্ছে মানুষের কারণে। কিন্তু তার পরেও এটা তাদের কাছে একপ্রকার আশীর্বাদ। মানুষ যে জাকির খানকে পছন্দ করে এটার বহিঃপ্রকাশ। সে কারণেই তারা এটা মেনে নিচ্ছেন।
১৯৯৪ সালের সন্ত্রাস দমন আইনের একটি মামলার রায়ে জাকির খানের ১৪ বছরের সাজা হয়েছিল। আপিল করার পর উচ্চ আদালতে সাজা কমিয়ে আট বছর করা হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ আবেদনে তাঁর সাজা কমে পাঁচ বছর করা হয়। পাঁচ বছরের সাজার মেয়াদ শেষে রোববার সকালে জাকির খানকে কারামুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী স‚ত্রে জানা যায়, জাকির খানের মুক্তির খবরে সকাল থেকে তাঁর অনুসারীরা মোটরসাইকলে ও প্রাইভেট কারের বহর নিয়ে জেলা কারাগারের সামনে অবস্থান নেন। নেতাকর্মীরা ট্রাকে সাউন্ড বক্স লাগিয়ে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে মোটরসাইকেলের বহর বের করেন। জেলা কারাগারের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড় হয়। এতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে যানজটের সৃষ্টি হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারাগার থেকে বের হন জাকির খান। এ সময় তাঁর অনুসারীরা তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পরে তিনি হুডখোলা গাড়িতে চড়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে দেওভোগের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন।
থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জাকির খানের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নেতা শাব্বির আলম খন্দকার হত্যাসহ ৪টি হত্যাসহ মোট ৩৩টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় বিভিন্ন সময় কারাগারে ছিলেন তিনি। কারাগারে থাকাবস্থায় গতবছরের ৬ নভেম্বর দুপুরে সোহেল রানা মিল্কী নামের জাকির খানের ওই অনুসারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কয়েকটি ছবি পোস্ট করে লিখেন, আজকে নারায়ণগঞ্জের সিংহ পুরুষ তরুণ প্রজন্মের অহংকার সেই ৯০ সালের সুপারস্টার নারায়ণগঞ্জের গণমানুষের নেতা জাকির খান ভাইয়ের সাথে আমরা মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার তিন ভাই এক সাথে দেখা করলাম। জাকির খান ভাই দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। ছবিগুলোতে দেখা যায়, জাকির খান তার অনুসারীদের সঙ্গে কোনো বাধা ছাড়াই আড্ডা দিচ্ছেন এবং এক নেতার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছেন।
আপনার মতামত লিখুন :