গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ মুক্তি, নেতৃবৃন্দের নামে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সহসভাপতি হাসনাত কবির।
বক্তব্য রাখেন বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব। সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য এস.এম কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সভাপতি রুহুল আমিন সোহাগ, রূপগঞ্জ উপজেলার সভাপতি সোহেল, কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখার সভাপতি আনোয়ার খান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, জেলা সভাপতি ও বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য সেলিম মাহমুদকে গত রাত দেড়টায় তার ফতুল্লার বাসার গেট ভেঙে তাকে যৌথ বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। তুলে নেয়ার সময় তিনিসহ তার পরিবারের সাথে যৌথবাহিনী খুবই খারাপ আচরণ করেছে। তার ৯ম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলেকে হাত দিয়ে থাপ্পড় ও লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। থানায় তার বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। তারপরও রাতের আঁধারে তুলে নেয়া হয়েছে। রবিনটেক্সের পূর্বের ২টি মামলায় তাকে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, যারা সারাক্ষণ মুজিববাদের বিরুদ্ধে কথা বলে, তারাই আবার মুজিবের প্রণীত ৭৪' এর বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করছে! এই সেলিম মাহমুদই আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে বাম জোটের ডাকা হরতালে নারায়ণগঞ্জে পুলিশের ব্যাপক আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, রবিনটেক্সের শ্রমিকরা ইউনিয়ন গঠন ও নিবন্ধন করার প্রচেষ্টা শুরু করার পর থেকেই কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিত ভাবে শ্রমিকদের সংগঠিত ভাবে মত প্রকাশের অধিকারকে দমন করতে ইউনিয়ন নির্মূল করার কাজ চালিয়ে আসছিল। রবিনটেক্স কর্তৃপক্ষের এই শ্রমিক বিরোধী অবস্থান নিয়ে শ্রম আদালতে ইউনিয়ন নিবন্ধনের মামলা চলমান। ইউনিয়ন নিবন্ধনের কার্যক্রম অমিমাংসিত থাকা অবস্খায় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কে গত চার মাস যাবত কারখানায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। কারখানা কর্তৃপক্ষ, পরিকল্পিত ভাবে উস্কানি দিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনে ঠেলে দিয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। পুলিশি হয়রানি আর চাকরিচ্যূত করে আতংক সৃষ্টির মাধ্যমে শ্রমিক ইউনিয়নকে র্নির্মল করার কৌশল হিসাবে ইউনিয়ন কর্মকর্তাসহ প্রতিবাদী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে, ইউনিয়নের সভাপতি সীমা আক্তারসহ ২২ জন শ্রমিককে গ্রেফতার করিয়েছে। পুলিশি হয়রানির মুখে অসহায় হয়ে পড়া এই শ্রমিকদের আইনি সহায়তা দেওয়া, ইউনিয়নের কাজ এগিয়ে নিতে তাদের উ]সাহিত করার মানবিক দায়িত্ব পালন করছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ। রবিনটেক্সের দুর্বিত্ত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিপীড়ত শ্রমিকদের আশ্রয়হীন করে দিয়ে বাধামুক্ত ভাবে শ্রম শোষণ করতে সেলিম মাহমুদ কে গ্রেফতার করিয়েছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্বায়িত্ব ছিল দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত দেশের বৃহত্তর অংশের শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আমরা দেখছি এসরকারও বিগত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের মতোই শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠ রোধ করতে শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলার নির্যাতনের পথ গ্রহণ করছে। এভাবে মালিকদের শোষণের স্বার্থ রক্ষায় সরকার শ্রমিক নেতা ও শ্রমিকদের নির্যাতন চালালে এর কঠিন প্রতিক্রিয়ায় এসরকারকেও পরতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :