নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি ও বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলোচিত মাকসুদ হোসেন জামিনে মুক্ত হয়েছে। তিনি গত ৫ মার্চ ডেভিল হান্টের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হয়ে ৪৩ দিন কারাগারে বন্দি ছিলেন। এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হওয়া জাতীয় পার্টির আরেক সহ-সভাপতি ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান ৫৩ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত পেয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন।
জাতীয় পার্টির তিনবারের সাবেক এমপি সেলিম ওসমানের সাথে দ্ব›েদ্ব ও বিরোধীতায় মুছাপুর ইউনিয়ন থেকে বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মাকসুদ হোসেন। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের বিশ দিনের মাথায় ২৫ আগস্ট তাকে অপসারণ করা হয়। এরপর থেকে মাকসুদ হোসেন বিএনপি ও নাগরিক পার্টির সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিএনপি একাংশ সাথে যোগসাজশ থাকায় আরেক অংশ রোষানলে ছিলেন তিনি। এদিকে আগামীতে ছাত্র-জনতার জাতীয় নাগরিক পার্টির দলীয় মনোনয়ন নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মাকসুদ হোসেন। তিনি আগামী ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এমপি হতে চান।
অন্যদিকে ৫৩দিন কারাগারে থাকা দেলোয়ার হোসেন প্রধান জামিন নিয়ে মুক্ত হয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। জানা গেছে, তিনি ঢাকা একটি ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে অবস্থান করছেন। ওসমান পরিবারের শ্যালক হিসেবে দেলোয়ার প্রধান কলাগাছিয়া দাপটে ছিলেন। ওসমানদের ভর করে গত বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ নেয়ার চেষ্টা করেন। এদিকে গ্রেপ্তার হওয়ার সংবাদে তার নির্বাচনী এলাকায় আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বিচারের নামে মোটা অঙ্ক লেনদেন ও এক তরফা বিচারে করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
বন্দর উপজেলার ৫ ইউনিয়নের মধ্যে এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামীলীগের দলীয় চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানউদ্দিন আহম্মেদ ও ধামগড় ইউনিয়নের জাতীয় পার্টির দলীয় চেয়ারম্যান কামাল হোসেন। তাদেরকে এখনো গ্রেপ্তার না করায় ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বন্দর ঘাট সংলগ্ন সুরুজ্জামান টাওয়ার থেকে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন প্রধানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি কলাগাছিয়া ইউনিয়ন ২নং মাদবপাশা এলাকার মৃত হারেজ আলী প্রধানের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্দর থানার ওসি মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, তাকে আটক করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সশস্ত্র হামলা, হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। এছাড়া তিনি সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
গত ৫ মার্চ রাতে বন্দর এলাকা থেকে মাকসুদ হোসেনকে নারায়ণগঞ্জে অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেফতার মাকসুদ হোসেন বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তিনবারের নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের হত্যা ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে এবং গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের পলাতক সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তার আস্থাভাজন হয়ে মাকসুদ হোসেন পরপর দু’বার মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। পরবর্তীতে গত ৫ আগস্টের পূর্বে সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে গিয়ে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন মাকসুদ হোসেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত প্রার্থীদের পরাজিত করে বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :