বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের টানা ক্ষমতায় নারায়ণগঞ্জে ওসমানদের আজমেরি ও অয়নের হোন্ডাবাহিনী কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসীদের অবস্থান নিয়ে আলোচনায় মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির আট সদস্য। এ সময় গত বছর ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর থেকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনে আজমেরি ও অয়ন ওসমানের সেসব কর্মী ও সমর্থকরা ঠাঁই নিয়েছে। এর ফলে বিএনপি নাম ভেঙ্গে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা ইতোমধ্যে মাথাচাড়া দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলে বিগত সরকারের সুবিধাভোগীরা অনুপ্রবেশে জেলা মহানগর কমিটি নেতাদের সর্তক বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু ইদানিং নারায়ণগঞ্জে পাড়া মহল্লা অলিগলিতে হোন্ডাবাহিনী ও কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে আগামীতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি বড় ধরনের সংকটের সম্মুখিন হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করেছেন তারা।
১৯ এপ্রিল শুক্রবার বিকালে দেওভোগ পার্কে ভবিষ্যৎ দেশের এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগরের রাজনীতির পরিকল্পনা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির একাংশ সদস্যরা আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ফারুক হোসেন, অ্যাডভোকেট বিল্লাল হোসেন, আওলাদ হোসেন, আমিনুর ইসলাম মিঠু, অ্যাডভোকেট আনিছর রহমান মোল্লা, অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম শিপলু, মনোয়ার হোসেন শোখন, সহিদুল ইসলাম রিপন।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক যুবদল নেতা আমিনুর ইসলাম মিঠু জানান, নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলীতে আজমেরি ওসমান ও অয়ন ওসমানের হোন্ডা-গুন্ডাবাহিনী ও কিশোর গ্যাং সুযোগ সুবিধা দিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের জড়িয়ে পড়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ওই সব বিষয়ে নজর না দেয়ায় আগামীতে মহানগর বিএনপিকে জনগণের কাছে অপরাধী হিসেবে দাঁড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুক্রবার আমরা আটজন আহবায়ক কমিটির সদস্য এই বিষয়টি নিয়ে নিন্দা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছি। নারায়ণগঞ্জ মহানগরের রাজনীতির পরিকল্পনা নিয়ে ও ওসমানদের অপতৎরপতা নিয়ে লিখিত একটি অবগত পত্র দেয়া হবে।
এর আগে দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিলো। আজমেরী ওসমান বাহিনী মিশেছে বিএনপিতে। বিশেষ প্রতিনিধি : এক সময়ের যুবরাজ খ্যাত আজমেরী ওসমান এখন কলকাতায় অবস্থান করলেও অনুসারী ও অনুগামী বাহিনীর সদস্যরা ভোল পাল্টাতে শুরু করেছেন। তারা এখন মিশে যাচ্ছে বিএনপির সঙ্গে। ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপির বিভিন্ন সারির নেতাদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে এসব কর্মীদের যারা এক সময়ে আজমেরী ওসমানের মটরসাইকেল বাহিনীতে থেকে পুরো শহর ও শহরতলী দাবড়ে বেড়িয়ে একের পর এক অপকর্ম করেছেন। গত ১৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান। সেদিন তিনি শো ডাউন দেখিয়ে শহরে প্রবেশ করেন। ছিল শত শত মটরসাইকেল ও গাড়ি। ওই বহরেও আজমেরী ওসমানের এক সময়কার ক্যাডার বাহিনীকে দেখা গেছে। এ নিয়ে শহরে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বহুল আলোচিত সমালোচিত আজমেরী ওসমান এখন ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি কলকাতায় মারকুইজ স্ট্রিট, নিউ মার্কেট ও আশপাশ এলাকাতে ঘুরাঘুরি করছেন। কলকাতায় থাকা একাধিক ব্যক্তি জানান, আজমেরী ওসমানের সঙ্গে রাজধানীর আলোচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন স¤্রাটকেও দেখা গেছে। দুইজন প্রায়শই নিউ মার্কেট এলাকাতে ঘুরাঘুরি করেন। আজমেরী ওসমানের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের পরিচিত কাউকে দেখা যায়নি। পরিবারের কাউকেও সঙ্গে দেখা যায়নি। গত ৫ আগস্ট বিকেলে শহরের কলেজ রোড এলাকাতে আজমেরী ওসমানের বাড়িতে হামলা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। তারা বাড়ির নিচে থাকা গাড়ি ও মটরসাইকেল ভাঙচুর করে। ভবনের ফ্লাটেও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এর আগেই স্বপরিবারে আজমেরী ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। শুরুতেই তারা দেশ ছাড়তে পারেনি। একটি বড় সময় ধরে আজমেরী ওসমান ও পরিবারের লোকজন বাংলাদেশেই অবস্থান করেন। পরে সুযোগ বুঝে ভারতে পাড়ি জমান। তবে পরিবারের কেউ কেউ দুবাইতে রয়েছেন জানা গেছে। দুবাইতে ইতোমধ্যে অবস্থান করছেন শামীম ওসমান ও তার পরিবারের লোকজন। তারাও শুরুতে ভারতের দিল্লীতে ছিল। সেখানে নিজামউদ্দিন আওলিয়ার দরকারে শামীম ওসমানকে দেখা গিয়েছিল। ওসমানদের নিজেদের বলয়ে বাহিনী তৈরিতে আজমেরী ওসমান আলাদা সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছিল। সরকার পতন হওয়ার পর থেকে ছাত্র-জনতা হতাহতের ঘটনায় কয়েক ডজন হত্যা মামলার আসামী হয়েছেন আজমেরী। প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের বিশাল বাহিনীর নিয়ন্ত্রক একেক সময়ে একেকজনের। সবশেষ নেতৃত্বে ছিলেন আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীম। এর আগে এ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন আকতার নূর, লিমন, নাজির প্রধান, মনির, নাসির প্রমুখ। এছাড়াও ছিলেন নাসির, আকতার নূর, রবিন, রাতুল, মনির, শ্যামল সাহা, কৃষ্ণা পাল, মুকিত মোঃ মোশায়েদ রহমান, নাসির হোসেন, হাবিবুর রহমান, সুমন, জানে আলম সানি, সনেট, আল্লান ওরফে সুরুজ জামান, রুবেল দেওয়ান ওরফে হানিফ দেওয়ান, সিনাফী, ইসমাইল, আজহার আলী, মাসুম ওরফে কাইল্যা মাসুম, রানা সিকদার, জিতু সরদার, আব্দুল্লাহ্, হাসান মাতবর, মেহেদী খন্দকার ম্যাকলিন, ফয়সাল, লিটন চন্দ্র দাস, ইব্রাহিম, বিল্লাল হোসেন, হাসিব, আরমান হোসেন, সজীব হোসেন। এছাড়া মনির, ইসদাইরের ইভন সহ আরো অনেকেই ওই মটরসাইকেল বাহিনীর সদস্য।
আজমেরী ওসমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল নাজিরের। কিন্তু তিনি এখন মিশে গেছেন জাকির খানের লোকজনদের সঙ্গে। এভাবেই সবাই মিশেছে বিএনপির সঙ্গে।
আপনার মতামত লিখুন :