News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

ভাইয়েদের রাজনীতিতে কাবু নারায়ণগঞ্জ


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৫, ১০:৩১ পিএম ভাইয়েদের রাজনীতিতে কাবু নারায়ণগঞ্জ

ক্ষমতার পালা বদলেও ভাইয়েদের রাজনীতি ছাড়তে পারছে না নারায়ণগঞ্জবাসী।

১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের পর থেকে নারায়ণগঞ্জে ভাই প্রথা রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে পড়েছে। তৎকালীন এমপি শামীম ওসমান নিজস্ব বাহিনী নিয়ে পুরো ৫ বছর নারায়ণগঞ্জ চষে বেড়িয়েছেন। ওই সময় সুইট, টুন্ডা নাসির, দিলীপ, গোলাম সারোয়ার, অগা মিঠু, লাল, টাওয়ার সেলিম, নিয়াজুল ইসলাম খান, মাকসুদ সহ একাধিক নেতারা ক্যাডার বাহিনীতে রূপ নিয়ে ছিলো। শামীম ওসমানের ভাই সম্বোধন ও বিশস্ত হিসেবে নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সমালোচিত ছিলো।

২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ভরাডুবি হওয়ার পর শামীম ওসমান ও তার বাহিনী পালিয়ে যান। ওই সময় চারদলীয় জোট সরকারে ভাইয়ের রাজনীতি আবারো সক্রিয় হয়ে উঠে। বিএনপি আমলে তৎকালীন এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, মমিনউল্লাহ ডেভিড, জাকির খান ছিলো আলোচিত ভাই সম্বোধনে নারায়ণগঞ্জবাসীর নজরে ছিলো। এরপর ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ী সাব্বির আলম খন্দকার হত্যাকান্ডে দেশত্যাগ করে জাকির খান। অন্যদিকে ক্লিন হার্ট অপারেশনে ২০০৪ সালের ২৪ নভেম্বর ঢাকায় ক্রস ফায়ারে নিহত হন মমিনউল্লাহ ডেভিড।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের এক তৃতীয়াংশ জয়ের পর নারায়ণগঞ্জে আবার ওসমান পরিবারের রাজত্ব শুরু হয়। প্রয়াত নাসিম ওসমান পুরো নারায়ণগঞ্জকে দাপুটে থাকেন। রূপগঞ্জে গাজী, আড়াইহাজারে বাবু ও সোনারগাঁয়ে কায়সার নিজস্ব বলয়ে তুললে ওসমান পরিবারের ক্ষমতা খর্ব হয়। অন্যদিকে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে এমপি কবরী সারোয়ার ছিলেন ওসমান পরিবারের সাবেক ছেলে বউ। তাকেও কাবু করে ছিলেন নাসিম ওসমান ও শামীম ওসমান। জেলা প্রশাসনের সভাকক্ষে কবরী সারোয়ারের সাথে বাকবিতন্ডতায় জড়িয়ে পড়েন শামীম ওসমান। ভাইয়েদের রাজনীতি বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় কবরী সারোয়ার ও সেলিনা হায়াৎ আইভী।

২০১১ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আইভীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন শামীম ওসমান। ওই সময় ভাইয়েদের রাজ্য ধ্বস নামাতে তৎকালীন এমপি কবরী সারোয়ার, সাবেক এমপি এস এম আকরাম, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন সহ একাংশ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মাঠে নামেন। পরাজিত শামীম ওসমান পরাজিত জের ধরে ২০১৩ সালের ৬ মার্চ মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকি হত্যা পর ভাইয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন নারায়ণগঞ্জবাসী। কিন্তু ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনাভোটে এমপি রাজত্ব আরো এক ধাপ এগিয়ে যান ভাইয়েদের বড় ভাই শামীম ওসমান। ওসমান পরিবারের দুই ভাই এমপি হওয়ার সুবাদে ভাইয়েদের সিংহাসন আরো উগ্র হয়ে উঠে। ২০১৪ সালে ৩০ এপ্রিল মারা যান নাসিম ওসমান এরপর এই আসনে এমপি হন ওসমান পরিবারের মেজ ছেলে সেলিম ওসমান। এর ফলে ভাইয়েদের রাজত্ব যেন আরো একধাপ নতুন রাজায় রূপ নেন তিনি।

শামীম ওসমান বলয়ে পাশাপাশি সেলিম ওসমান, মন্ত্রী গাজী, হুইপ বাবু ও এমপি খোকা-কায়সার নিজস্ব বলয়ে ভাইয়েদের রাজত্ব চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এদের পাশাপাশি প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান ও শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানও তাদের নিজস্ব বলয়ে বাহিনী গড়ে তুলেন। ভাইয়েদের বেপরোয়া ও উৎশৃঙ্খল বাহিনীতে আজমেরি ও অয়ন ওসমানরা কেউ কারো কমতি ছিলো না।

গত বছর ছাত্র জনতার জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যত্থানে টানা ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়েন আওয়ামীলীগ। এতে ওই সময়ের সকল ভাই ও তাদের ভাইয়েরা পালিয়ে দেশত্যাগ ও অনেকে দেশে গা-ঢাকা দেয়। ৫ আগষ্টের পর বিএনপি-জামায়াত পুনরায় তাদের রাজত্ব ফিরে আসেন। বিএনপি কেন্দ্রীয় আজাদের নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের জেলা ও মহানগরে ভাইয়েদের চাপ দেখা যায়। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও রূপগঞ্জ দিপু-কাজী মনিরের ভাইয়েদের রাজ্য বৃদ্ধি পায়। এদিকে দক্ষিণ মেরুতে ওসমান বিহীন খালি রাজত্বে এখন জাকির খান ভাইয়েদের মাফিয়া ডন রূপ নিয়েছে। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কোন পদপদবি না থাকলেও বিএনপি কয়েক নেতা, ব্যবসায়ী সংগঠন ও পরিবহন নেতাকর্মীরা এখন জাকির খান দরবারে আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। এ সময় ‘ভাই’ এটা সেটা ওটা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ যেন থামছে না।

Islam's Group