ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি নজরুল ইসলাম বাবু দেশ ছাড়লেও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ড. হাবিবুর রহমান মোল্লা। সম্প্রতি তার অনুসারীরা আড়াইহাজারের খাগকান্দা ইউনিয়নে কৃষকলীগের ব্যানারে এক মিছিল করেন। যা গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের প্রথম মিছিল। এই মিছিল নিয়ে ব্যাপক প্রশংসায় ভাসছেন আড়াইহাজারের এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা।
আড়াইহাজারবাসীর ভাষ্যমতে, নজরুল ইসলাম বাবু দীর্ঘদিন এখানে এমপিগিরি করলেও ৫ আগস্টের পর থেকে তার এবং তার অনুসারীদের কোনো কর্মকান্ড কিংবা মিছিল লক্ষ্য করা যায় নি। অথচ আওয়ামী লীগের সময় সে সবচেয়ে সুবিধাবাদী নেতা ছিল। অথচ বারবার মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়েও আওয়ামী লীগের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে হাবিব মোল্লার অনুসারীরা মিছিল করে তাক লাগিয়ে দিলেন।
জানা যায়, গত ১৯ এপ্রিল বিকেলে আড়াইহাজারের উপজেলার খাগকান্দা ইউনিয়নে হাবিবুর রহমান মোল্লার সমর্থকরা এই মিছিল করেন। মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন একই ইউনিয়নের হাবিবুর রহমান মোল্লার সমর্থক হান্নান মিয়া ও রুবেল হোসেন। কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ৫৩ বছর উপলক্ষে এই মিছিল করেন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লার আড়াইহাজারের সমর্থকরা। ঝটিকা মিছিলের একটি ভিডিও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই নজরুল ইসলাম বাবুর বর্তমান অবস্থান জানা না গেলেও গত কয়েকমাস আগে পরিবারের সঙ্গে হাস্যেজ্জ্বল অবস্থায় বাবুকে লক্ষ্য করা যায়। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে সক্রিয় দেখা যায় নি। বিপরীতে, শুরু থেকেই হাবিব মোল্লাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগের পক্ষে লেখালিখি করতে দেখা যায়। যা এখনো তিনি অব্যাহত রেখেছেন। সবশেষ তার নির্দেশে তার অনুসারীরা মিছিল করে এই প্রথম আওয়ামী লীগের শক্তির জানান দিলো। অথচ ক্ষমতাবস্থায় তাকেই কোণঢাসা করে রাখা হয়েছিল। বারবার মনোনয়ন চেয়েও তাকে মনোনয়ন না দিয়ে বাবুকে এমপি মনোনয়ন দেওয়া হয়।
এর আগে ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাবিব মোল্লাকে নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল এমপি বাবুর। ক্লিন ইমেজের এই নেতার এলাকায় ছিল ব্যাপক জনপ্রিয়তা। এর ফলে এক হাবিবুরকে নিয়েই বেকায়দায় পড়েছিল নজরুল ইসলাম বাবু। তার আগে, ঢাকায় অনুষ্ঠিত কৃষকলীগের সমাবেশে কৃষকলীগের কোনো পদে না থাকলেও নজরুল ইসলাম বাবু বিশাল বহন নিয়ে সমাবেশে হাজির হোন। এসময় বাবুর নামে নানা স্লোগান দিতে থাকেন তার সঙ্গে থাকা অসংখ্য নেতাকর্মীরা। আর কৃষকলীগের পদে থাকায় হাবিবুর রহমান মোল্লাও হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে সমাবেশে হাজির হোন।
আগে থেকেই নজরুল ইসলাম বাবুকে নিয়ে ছিল একাধিক বিতর্ক। টানা কয়েকবার তিনি এই আসনের এমপি নির্বাচিত হলেও আড়াইহাজারের অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে পারেন নি। এখনো অনেক রাস্তাঘাট বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এছাড়া এখানে নেই সকল সুবিধা সম্পন্ন কোনো হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়। সামান্য চিকিৎসা এবং উচ্চতর শিক্ষার জন্য আড়াইহাজারবাসীকে ঢাকার পথে ছুটতে হয়। যা নিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভ রয়েছে। তাছাড়া প্রায় সময় এই আসনটিতে খুন-খারাবি, মানবপ্রাচার, মারামারি-ডাকাতির ঘটনা ঘটে থাকে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আড়াইহাজারের আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে অবজ্ঞা করার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া ত্যাগীদের বাদ দিয়ে পুরো কমিটি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে তার অনুসারীদের রাখার অভিযোগ ছিল। তাই এসব নিয়ে নজরুল ইসলাম বাবুর উপর নিজের দলেরই লোকদের ক্ষোভ ছিল।
আপনার মতামত লিখুন :