News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

আজমেরী অয়নের হোন্ডাবাহিনী গেলো কই


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৫, ১০:৪০ পিএম আজমেরী অয়নের হোন্ডাবাহিনী গেলো কই

নারায়ণগঞ্জে আতংকের নাম হোন্ডাবাহিনী। শহর ও শহরতলী আশেপাশে এলাকায় এই বাহিনীর তান্ডবে বিগত ১৫ বছর অতিষ্ঠ ছিলো সাধারন মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। ওসমান পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম আজমেরি ও অয়নের নিজস্ব বলয়ে কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসী গ্রুপে থমকে যেত সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত এলাকা মানুষ। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে দুই ভাইয়ের হোন্ডা বাহিনীদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। দুই হাজারের অধিক এই বাহিনী সদস্যদের খুজেঁ পাচ্ছে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে হোন্ডাবাহিনী এবার ওসমান ছেড়ে বর্তমান সুবিধাভোগী নেতাদের অধীনে চলে গেছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে আজমেরি ওসমানের বাহিনী বর্তমান বিএনপি একটি অংশে ও অয়ন ওসমানের বাহিনী যুবদল ও ছাত্রদলের আরেকটি অংশে জড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে হোন্ডাবাহিনী আবার শহর ও শহরতলীতে আনাগোনা বৃদ্ধি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির আটজন সদস্য।

নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সন্তান আজমেরী ওসমান ও অয়ন ওসমান। আজমিরকে সবাই ডাকতেন ‘হাজী সাহেব’ আর অয়নকে সবাই ডাকতেন ‘ছোট এমপি’। শহর ও শহরের বাহিরে মিলিয়ে তার ছিল প্রায় ২ হাজার বেশি সদস্যের সন্ত্রাসী বাহিনী। এই বাহিনী নগরবাসীর কাছে পরিচিত ছিল হোন্ডা বাহিনী হিসেবে। সন্ত্রাসী বাহিনী বেষ্টিত আজমেরী এই শহরে ছিলেন মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠলেও তার বিরুদ্ধে কোনো থানায় একটি মামলাও নেই। এমনকি তার বিরুদ্ধে কেউ সাধারণ ডায়েরি করতে গেলেও তা নথিভুক্ত করতে রাজি হতো না তখনকার থানা পুলিশ। তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ড ছাড়াও নগরীর চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় মনির টাওয়ারের কেয়ারটেকার নুরুন্নবী, আলমগীর, ওসমান পরিবারের অন্যতম খলিফা নুরুল আমিন মাকসুদ, ব্যবসায়ী আশিক ইসলাম, টানবাজারের রং-সুতা ব্যবসায়ী গোবিন্দ সাহা ভুলু, মিঠু, সাংস্কৃতিক কর্মী দিদারুল আলম চঞ্চলসহ আরও অনেকগুলো হত্যাকাণ্ডে তার সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে গা ঢাকা দেন আজমেরী-অয়ন ওসমান ও তার কিছু ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা। অভিযোগ আছে তার বাহিনীর সদস্যরা এখন ভোল পাল্টে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার কাছে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের অনেকেই এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

দুই ভাইয়ের ছিল ব্যক্তিগত ‘টর্চার সেল’। তার বিরোধীতা করা লোকজনকে সেই টর্চার সেলে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালাতেন। তার অনুসারী সন্ত্রাসী বাহিনী সারা শহরে মোটর সাইকেল মহড়া দিয়ে বেড়াতো। এই ‘ হোন্ডা বাহিনীর’ মহড়ায় তটস্থ থাকতেন সাধারণ মানুষ। হত্যা, অপহরণ, জমি দখল, চাঁদাবাজি, জুট সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসা; এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকলেও তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে রাজি হতেন না। শিল্পাঞ্চলখ্যাত নারায়ণগঞ্জ শহরের ব্যবসায়ীরা জিম্মি ছিলেন এই আজমেরী ওসমান ওরফে হাজী সাহেবের কাছে।

আজমেরীর বাহিনীর অন্যতম ব্যক্তি ছিলেন আলী হায়দার শামীম। যাকে এই শহরের মানুষ পিজা শামীম বলে চিনতেন। এছাড়া, কাজী আমির, আলমগীর হোসেন আলম, মঞ্জুর আহমেদ, নাসির উদ্দিন, হামিদ, খায়রুদ্দিন মোল্লা, আক্তার নূর, ইফতি, রবিন, রাতুল, মনির, শ্যামল সাহা, কৃষ্ণ সাহা, মুকিত, নাসির হোসেন, শাকিল, সুমন, সানি, সনেট, কিশোর গ্যাং লিডার ইভন ছিলেন আজমেরীর সন্ত্রাসী বাহিনীর পরিচিত মুখ।

এদিকে অয়ন ওসমানের আস্থাভাজন হলেন হাবিবুর রহমান রিয়াদ, কাউছার হোসেন, আশরাফুল ইসলাম রাফেল, শুভ হাসনাত রহমান বিন্দু, আসাদুজ্জামান আসাদ, শাহরিয়ার রহমান বাপ্পি, রাজীব সাহা, হাজী সোহাগ রনি, শুভ রায়, শওকত হোসেন সুমিত, বাছেদ প্রধান মেম্বার, মেহেদী হাসান জুয়েল, ফাহাদ বিন জয়নাল, আরিফ হোসেন, অ্যাডভোকেট মো. হাসান, অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই তাঁর বাবা নাসিম ওসমান, দুই চাচা সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের প্রশ্রয়ে আজমেরী ওসমান শহরের উত্তর চাষাঢ়ায় একটি ও কলেজ রোডে দু’টি টর্চার সেল গড়ে তোলেন। সিসি ক্যামেরা দ্বারা টর্চার সেলের আশপাশের রাস্তায় পথচারী ও যানবাহন চলাচল সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করা হতো। শুধু খুন নয়, আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে তাঁর টর্চার সেলে ধরে এনে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। একই ভাবে অয়ন ওসমানও তার বাহিনী গড়ে তুলে ছিলো আগামীতে বাবা’র আসনে এমপি হতে।

গত আট মাসে অভিযোগ রয়েছে, ওসমান পরিবারের অনুসারীদের অনেকেই বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ আবার বিভিন্ন ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সাথে মিশে গেছেন। সন্ত্রাসী এই বাহিনীকে আশ্রয় দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়েছে বলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে। গত ২৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে কলেজের প্রধান গেটের সামনে একটি সিএনজিতে করে আসা তিন যুবককে পোস্টার সাঁটিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে দেখা যায়। আজমেরী ওসমান নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি। এছাড়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তাকে ও তার অনুসারীদের প্রকাশ্যে গুলি চালাতে দেখা গেছে। এর আগে, ২৩ জানুয়ারি মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সরকারি দপ্তরের দেয়ালে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পোস্টার সাঁটানো হয়। এসব পোস্টারে গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এবং তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়নের ছবি দেখা যায়।

নিষিদ্ধ সংগঠনের পোস্টারিংয়ের ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন এবং পোস্টারিং করা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। যদিও, এখন পর্যন্ত পুলিশ বা প্রশাসন কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে, জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পোস্টারিং করা কয়েকজনকে আমরা চিহ্নিত করেছি। দ্রুতই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এই বক্তব্যে মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে এখনো কর্মকর্তারা। কাউকে গ্রেপ্তার দূরে কথা সনাক্ত করতে পারেনি।

এদিকে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের টানা ক্ষমতায় নারায়ণগঞ্জে ওসমানদের আজমেরি ও অয়নের হোন্ডাবাহিনী কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসীদের অবস্থান নিয়ে আলোচনায় মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির আট সদস্য। এ সময় গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনে আজমেরি ও অয়ন ওসমানের সেসব কর্মী ও সমর্থকরা ঠাঁই নিয়েছে। এর ফলে বিএনপি নাম ভেঙ্গে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা ইতোমধ্যে মাথাচাড়া দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলে বিগত সরকারের সুবিধাভোগীরা অনুপ্রবেশে জেলা মহানগর কমিটি নেতাদের সর্তক বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু ইদানিং নারায়ণগঞ্জে পাড়া মহল্লা অলিগলিতে হোন্ডাবাহিনী ও কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে আগামীতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি বড় ধরণে সংকর্টের সম্মুখিত হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করেছেন তারা।

১৯ এপ্রিল শুক্রবার বিকালে দেওভোগ পার্কে ভবিষ্যৎ দেশের এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগরের রাজনীতির পরিকল্পনা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির একাংশ সদস্যরা আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ। উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য¡ ফারুক হোসেন, অ্যাডভোকেট বিল্লাল হোসেন, মো. আওলাদ হোসেন, মো. আমিনুর ইসলাম মিঠু, অ্যাডভোকেট আনিছর রহমান মোল্লা, অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম শিপলু, মনোয়ার হোসেন শোখন, সহিদুল ইসলাম রিপন।

Islam's Group