দূরদর্শিতা ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের চক্ষুশূলে পরিণত হতে হয়েছিল জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে। ওইসময় শামীম ওসমানের ভয়ে যখন বিএনপির অন্যান্য নেতারা ভয়ে তটস্থ থাকতো এবং আতাঁত করে রাজনীতি করতো তখন একমাত্র গিয়াসই তার সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছিল। যার ফলস্বরূপ গিয়াসকে একের পর এক মামলা, মধ্যরাতে বাসায় পুলিশের তল্লাশি ও পরিবারকে নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হতে হয়। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল বিএনপির অন্য দুই নেতা অধ্যাপক মামুন মাহমুদ এবং শাহ আলম। এদের মধ্যে মামুন মাহমুদ বর্তমানে জেলা বিএনপির আহবায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। দুজনেরই সঙ্গে শামীম ওসমানের সখ্যতা থাকার বিষয়টি নারায়ণগঞ্জের কারো অজানা ছিল না। প্রায় সময় শামীম ওসমান বিএনপি নেতা মামুন মাহমুদকে ভদ্রলোক বলে অভিহিত করতেন। এর ফলে এই দুজনকে সহজেই নারায়ণগঞ্জে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছিল। তাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হতো না। যা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে এখনো ক্ষোভ রয়েছে। এর আগে জেলা বিএনপির সভাপতি থাকা অবস্থায় গিয়াসের নেতৃত্বে জেলা বিএনপি আসার পর থেকেই দলটির রূপ বদলাতে শুরু করে। কারণ জেলা বিএনপির প্রত্যেকটি কর্মসূচীতে মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিকে গিয়াস উদ্দিন আহবায়ক হওয়ার পর থেকেই দীর্ঘদিন অচল হয়ে থাকা কমিটিকে সচল করেন। তৃণমূলের মতে, গিয়াসের নেতৃত্বে একের পর এক এমন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোভাব আরো চাঙ্গা হয়।
আওয়ামী লীগ বিহীন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে এমপি প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। তিনি সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। নির্বাচন ঘিরে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তিনি। ঈদের পরও বসে নেই তিনি। এবার তিনি সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে গণসংযোগের অংশ হিসেবে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। করছেন সবার সঙ্গে কুশল বিনিময়। এইসব শুভেচ্ছা মতবিনিময় সভায় গিয়াসকে আগামী নির্বাচনে এমপি করার বিষয় জোরালোভাবে উপস্থাপন হচ্ছে। আর রাজপথে না থেকেও এক বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় এসেছেন বিএনপি নেতা শাহ আলম। তিনি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নমিনেশন পাওয়ার আশা ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি জেলা বিএনপির নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা তার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছে এমন মন্তব্য করে কেন্দ্রে তার শক্তিশালী অবস্থানের জানান দিয়েছেন।
গত ৩ এপ্রিল ফতুল্লা থানা বিএনপি অঙ্গ সংগঠন নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে এক বৈঠকে বসে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মো. শাহ আলম বলেন, আল্লাহর রহমতে আপনেরা চিন্তা করবেন না। আমি শাহ আলম নিবার্চন করলে নমিনেশন পাওয়ার ক্ষমতা রাখি। ইনশাল্লাহ আমি নির্বাচন করব। কারন আমি দেখতাছি শুনছি কি হচ্ছে। এইযে ১৭ বছরে আপনারা আমাকে দেখেছেন, আমিও আপনাদেরকে দেখেছি, আপনারা আমাকে চিনেন। আমি আপনাদের ছেড়ে যাই নি। গত আওয়ামী লীগের আমলে ২৪টা মামলা খেয়েছি। এই ২৪টা মামলার সবগুলার ধারা অনেক খারাপ। আমার চেয়েও অনেকে আরও বেশি মামলা খেয়েছে যে মামলা খেয়েছে সে বুঝে আমি বলব আল্লাহ তাআলার রহমত হয়েছে বিদায় ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় হয়েছে। আল্লাহ মানুষকে সংশোধন হওয়ার সুযোগ দেন। যখন মানুষের অত্যাচার জুলুম বেড়ে যায় সংশোধন না হয় আল্লাহর তরফ থেকে সুনামির মত ধ্বংস এসে যায়। শেখ হাসিনা নিজেও কল্পনা করে নাই হেলিকপ্টার দিয়ে পালিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, আমি যখন জেলার রাজনীতি করেছি জেলা কমিটিতে ফতুল্লার ৩৬ জনকে নিয়েছি। মানুষ বলেছে এটা জেলার কমিটি না ফতুল্লার কমিটি। আমি ১০০ জনের কমিটি বানিয়েছি দেড়শ জনের কমিটি বানিয়েছি ২০০ জনের কমিটি বানিয়েছে সবাইকে প্রোভাইড করার জন্য।
গিয়াসের আগে জেলা বিএনপির কমিটিতে সদস্য সচিব থাকাকালে মামুন মাহমুদের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের নানা অভিযোগ উঠে। বিগত সময়ে যাদের আন্দোলনে দেখা যায়নি যাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, রয়েছে ক্ষমতাসীনদের সাথে সখ্যতা, টাকার বিনিময়ে তাদের সংশ্লিষ্ট থানা কিংবা পৌরসভার শীর্ষ পদের অধিকারি করেন। জেলা বিএনপির এই কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে দিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের সমাগম ঘটিয়েছেন। সেই সাথে তাদের অধিনে থাকা ১০ টি ইউনিট কমিটিও অনেক হিসেবে নিকেশ করে চূড়ান্ত করেন। কিন্তু গত ১৬ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশ নেয়ায় অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে বিএনপি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তৈমূরের অনুপস্থিতিতে নতুনভাবে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক করা হয় নাসির উদ্দিনকে। নাসির উদ্দিন আহবায়ক কমিটির দায়িত্বে আসার সাথে সাথেই সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে নিয়ে কমিটির অনুমোদন দিয়ে দেন। যে সকল কমিটির প্রায় প্রত্যেকটি বর্তমানে বিতর্কিত কমিটি হিসেবে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে এর আগের কমিটিতেও মামুন মাহমুদ বিতর্কিত হিসেবে পরিণত হয়েছিলেন। ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণার পরই বাণিজ্যকরণের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। ২৬ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠনের এক মাস পেরুতে না পেরুতেই জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের ১৮ লাখ টাকা মূল্যের নতুন একটি প্রাইভেটকার কেনার সংবাদ প্রচার হয়। মূলত মামুন মাহমুদকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই এই গাড়ি উপহার দেয়া হয়েছিল।
আপনার মতামত লিখুন :