News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

বিএনপির পর্যবেক্ষণে জাকির খান


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ০৯:৪২ পিএম বিএনপির পর্যবেক্ষণে জাকির খান

নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও সমর্থক ও ভক্তদের দিয়ে রাজপথে ছিলেন জাকির খান ওরফে কিং খান। প্রায় ২২ বছর বেশি সময়ে রাজনীতিতে নিজের উপস্থিতি থাকতে দেখেনি দলীয় নেতাকর্মীরা। একাধিক হত্যা, সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী ঘটনায় প্রায় ৩৩ মামলার আসামী ছিলেন তিনি। বর্তমানে সময়ে প্রায় ৩২ মামলা থেকে খালাস পেয়ে একটি মামলায় জামিন নিয়ে গত ১৩ এপ্রিল বের হয়েছে জাকির খান। দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিভিন্ন সাজে বিশাল শো-ডাউন নিয়ে জেলা কারাগার থেকে বাসায় যান তিনি। ওই সময় তিনি প্রতিক্রিয়া বলেছিলেন, আমার গায়ের চামড়া নারায়ণগঞ্জবাসীকে দিলেও ঋণ শোধ হবে না। তার এমন বক্তব্যে মুখে নয় বাস্তবে দেখতে চান বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

প্রায় এক যুগ পর বিএনপিতে ফিরে আসা ভবিষ্যত রাজনীতিতে সক্রিয় করার অপেক্ষায় পর্যবেক্ষণে রয়েছে জাকির খান। নারায়ণগঞ্জের একাধিক নেতা কেন্দ্রে পদপ্রাপ্তদের দারস্থ ও সিনিয়র নেতাদের কাছে তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কোন অপরাধীদেরকে আর সুুযোগ দেয়া হবে না।

১৯৯৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা থাকাকালে জেল থেকে বের হয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হন জাকির খান। ২৬ বছরের যুবকের উপর ভরসা করে তার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। তারপরও গত ২৫ বছরেও জাকির খান বিএনপি বা অঙ্গসংগঠনের সদস্য হতে পারেনি। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতা আসা পর মহানগর বিএনপি কমিটিতে জাকির খানের নাম রেখে প্রস্তাাবিত কমিটি জমা দেয়া হয়। কিন্তু দলের হাই কমান্ডের আপত্তিতে জাকির খান ও বদু নাম কর্টন করা হয় এমন গুঞ্জন শুনা যায়। এর কয়েকদিন পরই ২০০৩ সালে ব্যবসায়ী সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা ঘটনায় পুরো জড়িয়ে পড়েন জাকির খান সহ তার দুই মামুন ও জিকু খান। মামলা বাদি ছিলেন তৎকালীন বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার।

২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকারের ক্লিন হার্ট অপারেশন চলাকালে জাকির খান পলাতক জীবনে থাইল্যান্ডে ছিলেন। কেন্দ্রে যোগাযোগ করে দেশে ফেরার একটি পথ খুজেঁ পান তিনি। তখনই তাকে বলা হয়েছিলো, ক্লিন হার্ট সময়ে আত্মসমপর্ণ করে জেল খেতে মামলাগুলো জামিন নিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে থাকতে। কিন্তু ক্রস ফায়ারের ভয়ে জাকির খান নারায়ণগঞ্জ ফিরে নাই ফলে ১৯ বছর পলাতক জীবনে ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান তিনি। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ছোট ভাই মামুন খানের বিয়ে উপলক্ষে দেশে ফিরে আত্মগোপনে ছিলেন। দেওভোগ টু বসুন্ধরা বাড়িতে আনাগোনা থাকলেও প্রকাশ্যে ছিলো অন্তরালে। ওই সুযোগে দেওভোগ নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সক্রিয় করতে একাধিক সুযোগ সুবিধা প্রদান করেন। বিসিক সহ শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জাকির খানের প্রভাব বিস্তার শুরু করে।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের অনিহা কারণে এখনো তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করার জন্য চেষ্টা করেও যেতে পারছে না। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও যুগ্ম মহাসচিবরাও তার সাথে জিয়ারতে না থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে। এর ফলে কেন্দ্র ও স্থাণীয় পর্যায়ে শীর্ষ নেতা বিহীন কবর জিয়ারতে ব্যবস্থা নিচ্ছেন এমন শুনা গেছে।

জাকির খানের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপি স্থানীয় পাশাপাশি কেন্দ্রেও আপত্তি রয়েছে। ছাত্র সমাজ থেকে তাকে যখন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি করা হয়। তখন দেশের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারকারী নেতাদের কদর ছিলো। এর ফলে জাকির খান বিএনপিতে একটি হাতিয়ার ছিলো, কিন্তু দলের প্রয়োজনে তাকে পাওয়া যায়নি। তার স্থলে আলোচিত হয়ে উঠেছিলেন ক্রস ফায়ারের নিহত মমিনউল্লাহ ডেভিড। জাকির খান ও ডেভিডের সখ্যতা ছিলো অন্তরে। চাষাঢ়া ও দেওভোগে রাজনীতিতে তাদের মধ্যে ছিলো আধিপত্য লড়াই। ২০০৪ সালের ক্লিন হার্ট অপারেশে ক্রস ফায়ারে মারা যান ডেভিড। এরপর থেকে নারায়ণগঞ্জ সন্ত্রাসী রাজ্য কায়েম হারিয়ে যায়। গডফাদার হিসেবে আওয়ামীলীগের শামীম ওসমান, বিএনপির মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও গডমাদার হিসেবে আওয়ামীলীগের আইভী নাম রাজনীতি নেতাদের মুখে উঠে আসলেও কেউ প্রকাশ্যে রূপ নিতে পারেনি। নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসীদের রাজ্যত্ব গড়ে তোলা নিয়ে বক্তব্যে উঠে আসলেও ২০২২ সালের নাসিক নির্বাচনের পর থেকে পাড়া মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের আবির্ভাব হয়ে উঠে। ওসমান পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম আজমেরি ও অয়ন ওসমানের ছত্রছায়ার অভিযোগ হলেও তাদের পলায়নে এবার বিএনপি ফিরে আসা নেতাদের নাম উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে আগামী জেলা ও মহানগর বিএনপি কমিটি আসা পূর্ব পর্যন্ত জাকির খানকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন কেন্দ্র ও স্থানীয় বিএনপি শীর্ষ নেতারা।

Islam's Group