‘বিএনপির নমিনেশন পাওয়ার জন্য আমার নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতের সভাপতি পদ লাগবেই আমি সভাপতি পদ ছাড়বো না’ দম্ভ করেছেন মনির হোসাইন কাশেমী। জেলার বিরোধ নিস্পত্তির জন্য আয়োজিত বৈঠকে মনির কাশেমী ওই মন্তব্য করেন। তখন তাঁর পাশে মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান সহ অন্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জের বিবাদমান বিষয়ে মিমাংসার উদ্দেশ্যে ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বাদ আছর নারায়ণগঞ্জের ঐতিহাসিক ডিআইটি মসজিদের দ্বিতীয় তলায় এক বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর ও বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক সাহেবকে আমীরে ফয়সাল মেনে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়াল, নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল কাদির, নায়েবে আমীর মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, অর্থ সম্পাদক মুফতী মনির হোসাইন কাসেমী, আলীরটেক মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ আতাউল হক সরকার, দেওভোগ মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম মুফতী আব্দুর রহমান, রূপগঞ্জ উলামানগর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মুফিজুল ইসলাম, মাওলানা বদরুল আলম সিলেটী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জেলা সভাপতি মাওলানা ওবাইদুল কাদের নদভী, মহানগর সভাপতি মুফতী মামুনুর রশীদ, ইসলামী আন্দোলনের মহানগর সভাপতি মুফতী মাসুম বিল্লাহ, খেলাফত আন্দোলনের জেলা নায়েবে আমীর মুফতী এহতেশামুল হক কাসেমী, হাজীপাড়া মাদ্রাসার শিক্ষাসচিব মুফতী মাহমুদুল হাসান, খেলাফত মজলিসের মহানগর সহ-সাধারণ সম্পাদক মুফতী শেখ শাব্বীর আহমাদ।
এছাড়াও বৈঠকস্থলে উপস্থিত ছিলেন- খেলাফত মজলিসের মহানগর সভাপতি হাফেজ কবির হোসাইন, জমিয়তের জেলা সেক্রেটারি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, মহানগর সভাপতি, কামাল উদ্দীন দায়েমী, সেক্রেটারি মাওলানা মনোয়ার হুসাইন, মাওলানা মীর আহমদুল্লাহ, মুফতী আবু হানিফ'সহ বিভিন্ন মাদ্রাসা, মসজিদ ও ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বৈঠক বাদ আছর শুরু হয়। দীর্ঘ সময় বৈঠকের এক পর্যায়ে রাত আটটার দিকে মিমাংসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই রাগান্বিত অবস্থায় মুফতী মনির হোসাইন কাসেমীকে বৈঠক থেকে বের হয়ে মাওলানা ফেরদৌস ও তার সঙ্গীদেরকে নিয়ে বৈঠকস্থল ত্যাগ করতে দেখা যায়।
সূত্রমতে জানা যায়, বৈঠকে কমিটির পদ বিন্যাস নিয়ে নিজের মনপুত না হওয়াতেই তিনি বৈঠক থেকে উঠে চলে যান। বৈঠকে মাওলানা আব্দুল আউয়ালকে জেলা সভাপতি ও মুফতী মনির কাসেমীকে সেক্রেটারি প্রস্তাব দেওয়াতেই তিনি রেগে বের হয়ে যায়। এসময় উপস্থিত সবাই থামানোর চেষ্টা করলেও তিনি কাউকে পরোয়া করেননি। মূলত জেলা সভাপতি পদই তার দাবি ছিলো। কিন্তু উপস্থিত সবাই এবিষয়ে একমত না হওয়াই তিনি বৈঠকস্থল ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন যাবত চলমান এই বিরোধ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতেও মিমাংসা না হওয়ায় এবং মুফতী মনির কাসেমীর এভাবে চলে যাওয়াতে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের সবাই আশাহত হন।
মিমাংসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প‚র্বেই মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী চলে যাওয়ায় বেফাক মহাসচিব মুফতী মাহফুজুল হক সিদ্ধান্ত না দিয়েই বৈঠকের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের মিছিলে দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এদিন জুমআর নামাজের পর শহরের ডিআইটি কেন্দ্রীয় রেলওয়ে জামে মসজিদের সামনে এই ঘটনা ঘটে। প্রায় মিনিট দশেক ধরে হেফাজতের নেতাকর্মীদের মধ্যে হৈ চৈ ও হাতাহাতি চলে। পরে সিনিয়ররা নেতারা বার বার অনুরোধ করলে থামে। তবে পণ্ড হয়ে যায় পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল। পরবর্তীতে অপর একটি গ্রুপ মিছিল করে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
কিন্তু এসকল সমস্যার সমাধান না করেই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর হেফাজত ইসলামের নতুন কমিটি ঘোষণা করে দেয়া হয়। নারায়ণগঞ্জ হেফাজতে ইসলামের দুইজন নায়েবে আমীর থাকলেও তাদের একজনও কমিটি ঘোষণার সময়ে তারা কেউই ছিলেন না। সেই সাথে হেফাজতের একটি অংশের নেতাকর্মীরা এই কমিটিকে মেনে নেননি। তারা প্রত্যাখানের ঘোষণা দেন।
গত ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় শহরের বাগে জান্নাত মসজিদের দ্বিতীয় তলায় প্রতিনিধি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে হেফাজতে ইসলাম সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব এই কমিটি ঘোষণা করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফজত ইসলামের কমিটিতে সভাপতি হিসেবে রয়েছেন মুফতি মনির হোসাই কাসেমী এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন এবিএম সিরাজুল মামুন। সেই সাথে মহানগর হেফাজত ইসলামের কমিটিতে সভাপতি হিসেবে মুফতি হারুনুর রশদি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন মাওলানা মীর আহমাদুল্লাহ।
কিন্তু এই কমিটি ঘোষণার পর থেকেই হেফাজতের একটি অংশের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়। হেফাজতের নেতাকর্মীদের দাবী ছিলো নতুন কমিটিতে আওয়ামী লীগের দোসরদের জায়গা দেয়া হবে না। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে যারা ওসমান পরিবারের দোসর হিসেবে পরিচিত তাদেরকে জায়গা দেয়া হয়েছে। যা ওসমানীয় হেফাজত আখ্যা দিয়ে হেফাজতের নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারছেন না।
আপনার মতামত লিখুন :