মেয়েদের বোরকা ও হিজাব পরার পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে বিভিন্ন মহলে মতপার্থক্য থাকলেও তা ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী পর্দার একটি অংশ এবং এটি ধর্মীয় লেবাস-পোশাক সংক্রান্ত নির্দেশাবলির অন্তর্ভুক্ত। লেবাস পোশাক সম্পর্কে ইসলামে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে, যা মেনে চলা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। শরীয়তসম্মত লেবাস গ্রহণে বাধ্যবাধকতা মূলত শরীয়তের পক্ষ হতেই আরোপিত।
পোশাক সম্পর্কে কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছেথ হে আদমের সন্তানসন্ততি! আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, তোমাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করা দূষণীয় তা ঢাকার জন্য এবং তা সৌন্দর্যেরও উপকরণ। বসত তাকওয়ার যে পোশাক সেটাই সর্বোত্তম। এসব আল্লাহর নির্দেশনাবলির অন্যতম। যাতে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা আরাফ : ২৬) শরীয়ত 'সতর' ঢাকাকে রুচি ও স্বভাবের ওপর ছেড়ে দেয়নি, বরং দ্বীনের অপরিহার্য বিধান বানিয়ে দিয়েছে। কারণ মানুষের স্বাভাবিক রুচি ও শালীনতাবোধকে সংরক্ষণ করার জন্যও সুনির্দিষ্ট নীতি ও নির্দেশনার প্রয়োজন। অন্যথায় বিভিন্নভাবে তা বিনষ্ট হতে পারে। অর্থের লালসা, খ্যাতির মোহ, প্রদর্শন-প্রিয়তা ও নির্বিচার অনুকরণ মানুষের শালীনতাবোধকেও পরিবর্তন করে দেয়। বর্তমান সমাজের মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত।
পোশাক শুধু বাইরের বিষয় নয়, তা মনের গতিবিধিকেও নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো পোশাক মানুষকে অহঙ্কারী করে। কোনো পোশাক বিনয় দান করে। কোনটা উশৃঙ্খল হওয়ার উসকানি দেয় আর কোনটা করে শান্ত সমাহিত। হৃদয় ও আত্মার পবিত্রতা এবং বাহ্যিক আচার-আচরণেও পোশাকের প্রভাব অনস্বীকার্য। এজন্য ইসলামী শরীয়তে লেবাস-পোশাকের কিছু নীতি রয়েছে, যা অনুসরণ করে মানুষ পোশাকের কল্যাণ লাভ করতে পারে এবং পোশাকের অকল্যাণ থেকে রক্ষা পেতে পারে।
লেবাস অবশ্যই সতর-আবৃতকারী হতে হবে। কুরআন মজিদের উপরোক্ত আয়াতের 'যা তোমাদের লজ্জাস্থানকে আবৃত করে' বাক্যাংশে এই মূলনীতির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। যা প্রমাণ করে পোশাকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য সতর ঢাকা।
হাসিদে এসেছে, এত সংক্ষিপ্ত পোশাক পরিধান করা যে, সতর বা সতরের কিছু অংশ খোলা থাকে বা এত পাতলা কাপড় ব্যবহার করা যে, শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দৃষ্টিগোচর হয়, পুরুষ মহিলা উভয়ের জন্যই তা হারাম ও নিষিদ্ধ। তেমনি এত আঁটসাঁট পোশাক, যার ওপর দিয়ে শরীরের আবরণীয় অঙ্গসমূহ ফুটে ওঠে তাও বর্জনীয়। পুরুষের জন্য টাখনুর নিচে কাপড় পরা হারাম।
ইসলামে রেশমের পোশাক পুরুষের জন্য নিষেধ, কিন্তু নারীর জন্য অনুমোদিত। স্বর্ণের ব্যবহার নারীর জন্য জায়েজ, কিন্তু পুরুষের জন্য হারাম করা হয়েছে। এছাড়া যে কোনো রঙের কাপড় নারীরা পরিধান করতে পারে, কিন্তু পুরুষের জন্য কিছু কিছু রং পরিহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তোমরা রেশমের কাপড় পরিধান করা না। কেননা, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রেশম পরিধান করবে সে আখিরাতে তা থেকে বঞ্চিত হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৮৩৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২০৬৯/১১)।
আপনার মতামত লিখুন :